নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার যুবক সাগর মিজি পেশায় ঝালাইমিস্ত্রি। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও ভার্চুয়াল জগতে নিজেকে তিনি স্নাতকোত্তর পরিচয় দিতেন। একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডিও রয়েছে তাঁর। আর এসব আইডি ব্যবহার করে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন তিনি। সর্বশেষ চট্টগ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে একই কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তোলেন সাগর। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের একটি রিসোর্টে ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে পালিয়ে যান তিনি।
গত শনিবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড টোল প্লাজা এলাকা থেকে সাগর মিজি নামের ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে এমন তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে র্যাব। গতকাল রবিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মাহ্ফুজুর রহমান জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার একটি রিসোর্টে কক্ষ ভাড়া নেন সাগর মিজি। এরপর তিনি হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানান, ২০ সেপ্টেম্বর তাঁর স্ত্রী ঢাকা থেকে আসবেন। তখন দুজন থাকতে পারবেন, এমন একটি কক্ষ ভাড়া নেবেন। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর সাগর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এক নারীকে নিয়ে ওই হোটেলে অবস্থান করেন। পরদিন সকালে হোটেল কর্তৃপক্ষ ওই কক্ষে কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে তরুণীর লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে।
ঘটনার ছায়া তদন্তে নেমে প্রযুক্তির সাহায্যে সাগর মিজিকে শনাক্ত করে র্যাব জানায়, হোটেলে দেওয়া মোবাইল নম্বর ও অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাগর মিজিকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ওই তরুণীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তাঁকে কক্সবাজার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাগর র্যাবকে জানিয়েছেন, রিসোর্টের কক্ষে ওই তরুণীকে তিনি ধর্ষণ করেন। এ সময় নারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তাঁর। একপর্যায়ে ওই তরুণীর গলা চেপে ধরে দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দিলে মেঝেতে পড়ে যান। তখন ওই তরুণীর গলা টিপে ধরে পাশে থাকা গ্লাস দিয়ে কয়েকবার মাথায় সজোরে আঘাত করে হত্যা করেন।
র্যাব কর্মকর্তা মাহ্ফুজুর রহমান আরো জানান, এরই মধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ধরা পড়ার আগে তিনি অন্তত ১২ নারীকে ধর্ষণ করেছেন। তবে তাঁদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁর ফাঁদে পা দেওয়া নারীদের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীও রয়েছেন। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।