বিডি ঢাকা ডেস্ক
‘নারী-কন্যার সুরক্ষা করি, সহিংসতা মুক্ত বিশ্ব গড়ি’- এই প্রতিপাদ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপিত হয়েছে। সোমবার দিবসটি উদযাপনকালে জয়িতাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাকিব হোসেন তরফদার, সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ।
জেলাপর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের মধ্যে রয়েছেন- অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বেলেপুকুরের নূর ফাতেমা, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নাচোলের লাভলী ইয়াসমিন, সফল জননী ভোলাহাটের কুলসুম আরা, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা শিবগঞ্জের তাসলিমা খাতুন, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মনিকা সরেণ।
এছাড়া সদর উপজেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের মধ্যে রয়েছেন- অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী বেলেপুকুরের নূর ফাতেমা, সফল জননী মহিপুরের মোসা. রেহেনা বেগম, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা লক্ষ্মীনারায়ণপুর-ইসলামপুরের রাবেয়া, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় গোবরাতলা ইউনিয়নের মনিকা সরেণ।
জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ তার বক্তব্যে জয়িতাদের উদ্দেশ্যে বলেনÑ আপনাদেরকে এই সম্মাননা সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা গর্বিত। এটা আমাদের জন্য খুবই ভালো লাগার বিষয়। এই একটি আয়োজনের মাধ্যমে আমরা এই সংবর্ধনা দিতে পেরেছি। আর আমরা যে জয়িতাদের জীবনকাহিনী শুনলাম, শত প্রতিকূলতার মাঝেও তারা থেমে যাননি। অনেক সময় পরিবার সাপোর্ট করেনি, সমাজ সাপোর্ট করেনি, অনেকের কাছের লোকজন তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের আরেকজন হচ্ছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন- যখন একটি পরিবারে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন তার কোনো লৈঙ্গিক ব্যাখ্যা থাকে না, তখন তার একটিই মাত্র পরিচয় থাকে, সে একজন মানুষ। কে মেয়ে কে ছেলে এই বৈষম্য মনোবৃত্তি আমাদের পরিহার করতে হবে। আপনারা আপনাদের নিজের জীবন থেকে দেখছেন, বুঝছেন। তাই আপনাদেরও উচিত, এই বৈষম্য দূর করার কাজে সকলকে সচেতন করা। কারণ নিজে যখন বঞ্চনার শিকার হওয়া যায়, তখনই বোঝা যায় কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত হবার কষ্ট কতটা। আমরা সকলেই যদি আমাদের মেয়েবাচ্চাদের তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিই, তাহলে তারাও একটা ভালো জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। তারা এভারেস্ট শৃঙ্গও জয় করেছে। তাই সবই সম্ভব, শুধু তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মেয়েদেরকে যদি আমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারি, যেটা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটির বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলেই আমাদের সমাজ এগিয়ে যাবে। অর্ধেকের বেশি এই জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় আনতে না পারলে কখনোই কিন্তু আমরা আমাদের দেশের ও জাতির কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে পারব না। এর জন্য অহেলিত মেয়েদেরকেও নিজে থেকে সর্বসম্মুখে এগিয়ে আসতে হবে। আজকের এই জয়িতারা আমাদের নারীসমাজের জন্য বিরাট উদাহরণ ও অনুপ্রেরণার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের জীবনযুদ্ধে সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের ৫টি ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পুরস্কার হিসেবে অর্থ, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
সোমবার সকালে উপজেলা সভাকক্ষে স্থানীয় প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যা। সভায় অন্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুসাহাক আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ, সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার দাস, রহনপুর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল হক, বিএমডিএ কর্মকর্তা আহসান হাবীবসহ অন্যরা।
আলোচনা শেষে উপজেলার ৫ জন জয়িতাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
অপরদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১০টায় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা মিনি কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা সরকারের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় সূচনা বক্তব্য দেন- উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতো। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- নাচোল মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ওবাইদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা নুরুল আওয়াল, রাজবাড়ী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হুমায়ন কবীর আজম, শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নাচোল সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্যরা। আলোচনা শেষে ৫ জন জয়িতাকে ৫ ক্যাটাগরিতে সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। এরা হলেন- আক্তারা বেগম (অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী), লাভলী ইয়াসমিন (শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী), করুনা বালা (সফল জননী), মিনতি কিসকু (নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে সংসার শুরু করা নারী), খালেদা খাতুন (সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান)।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ।
পরে জয়িতাদের মধ্যে ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।