পটুয়াখালী সংবাদদাতা : পটুয়াখালীতে এক তরুণীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে বিয়ে করার অভিযোগে মামলা করেছেন একজন কলেজছাত্র। পটুয়াখালীর আদালতে এই মামলা দায়েরের পর আদালত সেটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে ওই তরুণী স্ত্রীর সম্মান দাবি করে কলেজছাত্রটির বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। ওই কলেজছাত্র পটুয়াখালীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তরুণীও ঢাকায় পড়ালেখার পাশাপাশি বেসরকারি গবেষণার চাকরি করেন।
মামলায় একজন তরুণীকে প্রধান আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আরো ছয়-সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩ অক্টোবর দায়ের করা ওই মামলায় বলা হয়েছে, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ওই ছাত্রকে তরুণী অনেক দিন ধরে ফোনে এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তাতে ছাত্রটি রাজি না হওয়ায় চোখ বেঁধে তাকে অপহরণ করা হয়। এরপর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে সাত-আটজন ব্যক্তি বলপূর্বক একটি নীল কাগজে স্বাক্ষর করতে তাকে বাধ্য করেন। এ নিয়ে একটি কাবিননামা তৈরির পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে তারা সন্দেহ করছেন।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আদালতে ওই বিয়ের একটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজছাত্রের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমার মক্কেলকে যে জোর করে বিয়ে করা হয়েছে, সেটা ভিডিও দেখলেই প্রমাণ হয়ে যায়। সেখানেই বোঝা যাচ্ছে, এই বিয়েতে আমার মক্কেল রাজি নন। তাকে জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
তাই এর বিচার চেয়ে তারা আদালতে মামলা করেছেন। পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এখন এ নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
যে তরুণীর বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই তরুণী গত ১৫ অক্টোবর থেকে স্ত্রীর পরিচয়ের দাবিতে কলেজছাত্রের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। জোর করে বিয়ের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ওই তরুণী। তিনি বলেছেন, ‘গত বছর (২০২০) এপ্রিল মাস থেকেই ওই ছেলের সঙ্গে আমার প্রেম। আমরা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একত্রে বাসায়ও থেকেছি। এখন শুনতে পেয়েছি, আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এ কথা আমার বড় ভাই, স্বজনদের জানানোর পর তারা ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। সে নিজের ইচ্ছায়ই বিয়ে করেছে।’
তরুণীর দাবি, ঢাকার রায়ের বাজারের একটি কাজি অফিসে তাদের বিয়ে হয়েছে। তিন দিন ধরে তিনি ছেলের বাড়িতে এসে উঠেছেন। ‘আমার যা-ই হোক, আমাকে মেরে ফেললেও আমি এখানেই থাকব’, বলেছেন তিনি।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওটি সেই সময়ের বলে নিশ্চিত করেছেন তরুণী। এই ভিডিওর একটি কপিও আদালতে মামলার সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন তরুণী একটি নীল কাগজের বইতে স্বাক্ষর করছেন। পাশেই তরুণ ছাত্রটি বসে রয়েছেন। পেছনে একজন দাঁড়িয়ে তার ঘাড় চেপে তাকে সোজা তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করছে। সেখানে আরো কয়েকজনের উপস্থিতি দেখা যায়।
স্বাক্ষর করার পর একজন লাল শার্ট পরিহিত ব্যক্তি প্রথমে মেয়েটিকে মিষ্টি খাইয়ে দেন। এরপর তরুণের মুখে জোর করে মিষ্টি দেওয়া হলে তিনি সেটা ফেলে দেন। তখন তাকে সেই ফেলে দেওয়া মিষ্টি উঠিয়ে খাওয়ার জন্য ধমক দেন লাল শার্ট পরা ব্যক্তি।