বিডি ঢাকা ডেস্ক
রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও অস্থির বাজার। চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে মূল্য পরিস্থিতি আগেভাগেই উত্তপ্ত। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে তেল, ছোলা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য। তবে বাড়তি দামের কারণে কমে গেছে বেচাকেনা। ক্রেতা কমে গেছে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ।
চার কারণে বাজারে ক্রেতা কমে গেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া, পণ্যের দাম ক্রমে বাড়তে থাকা, জেলায় জেলায় বড় মোকাম তৈরি হওয়া ও কম দামের বিকল্প পণ্যের দিকে ক্রেতার আগ্রহ বাড়ার কারণে ক্রেতা কমে গেছে খাতুনগঞ্জে। অতীতে কোনো রমজানের আগে এই মোকামে ব্যবসা এত কম ছিল না।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসো- সিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, ‘আগে রোজা শুরুর দুই মাস আগেই নিত্যপণ্য কেনার বাড়তি প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু এ বছর উল্টো চিত্র। এখন পণ্যের কোনো অভাব নেই; অভাব ক্রেতার। স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ ক্রেতা কমে গেছে।’ তবে চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘ক্রেতা কমার মূল কারণ অতিরিক্ত দাম। ব্যবসায়ীদের এটি বুঝতে হবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া পণ্যের দাম যাতে না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে সবাইকে।’
বাড়ছে দাম
খাতুনগঞ্জে গতকাল সয়াবিন তেল বেচাকেনা হয়েছে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৬ হাজার ২৫০ (মিল থেকে উত্তোলনযোগ্য) টাকা, পাম অয়েল ৫ হাজার ও চিনি মণপ্রতি ৮ হাজার ৯০০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে অ্যাংকর ডালের দাম কেজিপ্রতি ৪ টাকা বেড়ে ৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৬ টাকায়। অথচ গত বছর এই সময়ে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।
পণ্য কেনার হার কমছে
টানা দুই বছর রমজানের আগে অস্থির হয়ে যাচ্ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। তাই বিকল্প পথে হাঁটতে শুরু করেছেন ক্রেতারা। তারা পণ্য কেনার হার কমিয়ে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ঝুঁকছেন বিকল্প পণ্যের দিকে। মেসার্স আল্লার দান দোকানের মালিক হেমায়েতুর রহমান বলেন, ‘ছোলার দাম ক্রমে বাড়তে থাকায় অনেক ক্রেতা বিকল্প হিসেবে কিনছেন অ্যাংকর ডাল বা ডাবলি।’ ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে খেজুরের চাহিদাও ক্রমে কমছে। রমজানের দুই মাস আগে থেকে খেজুরের বিক্রি জমজমাট থাকত এই পাইকারি মোকামে। কিন্তু এখন বিক্রি কমে অর্ধেক হয়েছে।
বোতলজাত সয়াবিনের দাম ক্রমে বাড়তে থাকায় পাম অয়েল বেশি কিনছেন ক্রেতারা। নগরীর হালিশহরে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করি। বোতলজাত সয়াবিনের ক্রেতা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। দাম কিছুটা কম থাকায় পাম অয়েল বেশি কিনছেন ক্রেতারা।’ খাতুনগঞ্জ থেকে পাইকারি দরে নিয়মিত পণ্য কেনেন মোবারক আলী। তিনি বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আগে রমজানের মাসখানেক আগেই বাজার করে ফেলতাম। এখন রমজানের সময় বাজার করি। পণ্য কিনি এক সপ্তাহের।’ আরেক ক্রেতা সোলাইমান ভূঁইয়া বলেন, ‘রমজানে সব সময় ছোলা কিনতাম আমি। গত বছর থেকে আর ছোলা কিনছি না; অ্যাংকর ডাল বা ডাবলি কিনছি।’
নির্ভরতা কমছে খাতুনগঞ্জের ওপর
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার পণ্য আগে বেচাকেনা হতো খাতুনগঞ্জে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এই মোকামের জৌলুস ক্রমে কমছে। এখন জেলায় জেলায় বড় বড় মোকাম হয়েছে। নতুন নতুন আমদানিকারকও আছেন। তাই খাতুনগঞ্জে এসে এখন আর পণ্য কিনছেন না অনেক জেলার খুচরা বিক্রেতারা।