মাওয়ায় পদ্মা সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে। গত ১০ ডিসেম্বর আলোচিত এ সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে সেতুর মূল কাঠামো। এখন চলছে বাদবাকি কাজ।
পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো দৃশ্যমান হওয়ার সংবাদের মধ্যেই আলোচনায় উঠে আসে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কথা। জানা যায়, সেতু বিভাগের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ নৌরুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।
গণমাধ্যমে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়। সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আগেই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের চূড়ান্ত জরিপ প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সরকার। আর এ সেতুও নিজস্ব অর্থায়নে করা হবে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু আপাতত কোনো পরিকল্পনায় নেই।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সেতু বিভাগের সচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রথম সেতু চালুর পর দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরুর একটি পরিকল্পনা আমাদের ছিলো। তবে সে বিষয়ে এখন আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।
এর আগে ২০২১ সালের মে-জুন নাগাদ দ্বিতীয় সেতুর বিস্তারিত সমীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিলো। যুক্তরাজ্য, কোরিয়া ও স্পেনের তিনটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ সমীক্ষার কাজ করার কথা ছিলো।
প্রথম পদ্মা সেতুর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করার পর থেকেই দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ২৬ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশন দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর পিডিপিপি অনুমোদন করে।
ছয় দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর এ পিডিপিপি অনুমোদন করে। সেতুর নির্মাণ ব্যয় বহনের জন্য ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয় সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে।
দরপত্রের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৩ সালে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে। এর জন্য চীনা কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট (জিটুজি) ঋণে সেতু নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। যার ফলে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর জন্য সরকারকে কোনো টাকা দিতে হবে না। বিল্ড, ওউন, অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। যার অর্থায়ন করবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজ শেষে টোল থেকে সেতু নির্মাণের জন্য ব্যয়কৃত টাকা পরিশোধ করা হবে।
এত পরিকল্পনার কোনোটিই গত নয় বছরে আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘ এ সময়ে সেতু নির্মাণের জন্য অর্থায়নে আগ্রহী কোনো দেশ বা সংস্থা পাওয়া যায়নি।
সেতু বিভাগের মহাপরিকল্পনায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশের মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জেলার পদ্মা নদী পারাপারে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানের চেয়ে মাওয়া-জাজিরা অবস্থান দিয়ে বেশি সময় লাগবে। ঢাকা এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও নড়াইলের একাংশ, গোপালগঞ্জ, যশোর এবং মাদারীপুর জেলার দূরত্ব কমানোর জন্য পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।
আর প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, পিডিপিপি অনুমোদিত হয়েছে। বৈদেশিক অর্থায়নের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে।