শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন

পেকুয়ায় মামলা করায় ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক অপহরণ ছাত্রদল নেতার!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩৮৪ বার পঠিত

চকরিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা : কক্সবাজারের পেকুয়ায় ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে ধর্ষক নূর হোসেন আবিদের চাচা মগনামা ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি জিয়াউর রহমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী নিজে বাদী হয়ে থানায় মামলা রুজু করার পর দিন ডাক্তারি পরীক্ষা দিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে রাতেই ফেরার পথে ওই ছাত্রীর গাড়ি গতিরোধ করে জোরপূর্বক অপহরণ করা হয়।

এর পর অনেকটা জিম্মি করেই ওই ছাত্রীকে দিয়ে ফেসবুক লাইভে কিছু কথা বলানো হয়, এই মর্মে যে দীর্ঘদিন ধরে আবিদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। স্থানীয় মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের ইন্ধনেই ধর্ষণের ঘটনার নাটক সাজিয়ে তাকে দিয়ে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

এই দাবি করে ধর্ষিতা ছাত্রীর বড় বোন বুধবার (২১ এপ্রিল) রাতে পেকুয়া রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এ সময় বড় বোন পুলিশসহ প্রশাসনের কাছে তাঁর অপ্রাপ্তবয়স্ক ছোট বোনকে (ধর্ষিতা) জীবিত উদ্ধারে সহায়তা চান।

সংবাদ সম্মেলনে বড় বোন বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ভোর রাতে নূর হোসেন আবিদ (ধর্ষণ মামলার আসামি হয়ে বর্তমানে জেলে) আমাদের বাড়িতে যায়। ওই সময় আবিদ আমার বোনকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে আমার বোন চিৎকার দেয়। তখন স্থানীয় লোকজন গিয়ে আবিদকে আটক করে।

এ সময় স্থানীয়ভাবে আবিদের সঙ্গে বোনের বিয়ে দেওয়ার জন্য স্বজনরা চাপ দেয়। পরে আবিদের পরিবার তা না মানলে আমার বোন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ পৌঁছে আমার বোনকে উদ্ধার ও আবিদকে আটক করে। থানায় নেওয়ার পর আমি যখন বাদী হতে চাই, তখন মগনামা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও ধর্ষকের চাচা জিয়াউর রহমান আমাকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়। শুধু আমি নই, আমাদের সমাজ সর্দার হাবিবকেও মুঠোফোনে হুমকি দিয়েছেন।

এ সময় মুঠোফোনে জিয়াউর রহমান আমাকে বলেন, কেউ বাদী হলে তাকে কেটে টুকরো টুকরো করব। এই কথপোকথনের রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে। এরপর ভয়ে আমি বাদী হতে না চাইলে আমার বোন স্ব-ইচ্ছায় ইজ্জত রক্ষার্থে বাদী হয়। থানার কাজ শেষ হলে পর দিন সকালে আমার বোনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যাই। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর আদালত হয়ে আমরা সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথিমধ্যে মগনামা সাতঘরপাড়া এলাকায় আমাদের বহনকারী অটোরিকশা আটকিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ২-৩ জন আমার বোনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর বড় বোন আরো বলেন, আমার বোনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর হুমকি-ধামকি দিয়ে ওই রাতেই জোরপূর্বক সংবাদ সম্মেলন করানো হয়। সেই সংবাদ সম্মেলনে আসামি নূর হোসেন আবিদের অভিভাবকরা আমার বোনের দুই পাশে বসে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কিছু কথা বলানো হয়েছে। যা মোটেও সত্য নয়। মামলা রুজু হওয়ার সময় থানায় আমি উপস্থিত ছিলাম। আমার বোন স্বেচ্ছায় এজাহার দিয়েছে। সব কিছুর সাক্ষি আমি নিজেই।

তিনি বলেন, বোনকে অপহরণ করার পর এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে, আমার বোনকে তারা মেরে ফেলতে পারে। এজন্য আমি পুলিশ ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। এখন আমার বোন কেমন আছে? কোথায় আছে তা আমি কিছুই জানি না। আমার অপ্রাপ্তবয়স্ক বোনকে উদ্ধারে সবার সহযোগীতা চাই।

অভিযোগের ব্যাপারে মগনামা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি জিয়াউর রহমান দাবি করেন, ওই ছাত্রীকে তার ভাইপো আবিদ ধর্ষণ করেনি। পূর্ব বিরোধের জের ধরে মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করছেন। তাছাড়া ওই ছাত্রী নিজের ইচ্ছেতেই সংবাদ সম্মেলন করে আসল ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছে। ছাত্রীকে অপহরণ করার ঘটনাটিও শতভাগ মিথ্যা।

উল্লেখ্য, গত রবিবার দিবাগত ভোর রাতে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কোদাইল্যা শিয়া গ্রামে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ধর্ষিতা শিক্ষার্থী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তার হয়ে জেলবন্দি ধর্ষক নূর হোসেন আবিদ (২২) একই ইউনিয়নের সাতঘর পাড়ার নূর মোহাম্মদের ছেলে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com