ফরিদপুর সংবাদদাতা : ফরিদপুরের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ইউপি চেয়ারম্যান মলয় বোস হত্যা মামলার প্রধান আসামী আওয়ামী লীগ নেতা ইমামুল হোসেন তারা মিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার দুপুরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফরিদপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফেরেন তিনি।
২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টে তিনি ওই মামলায় ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস পেলেও নথিপত্রে ক্রটির কারণে কারামুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন।
ইমামুল হোসেন তারা মিয়া অবিভক্ত নগরকান্দা-সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি সালথার গট্টি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানও ছিলেন।
২০১৩ সালের ২৪ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মলয় বোস হত্যা মামলার রায়ে ইমামুল হোসেন তারা মিয়াসহ নয়জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে তিনি ওই মামলায় খালাস পান। তবে উচ্চ আদালতের রায়ে খালাস পেলেও নথিপত্রে ত্রুটি থাকায় দীর্ঘদিনেও তিনি কারামুক্তি পাচ্ছিলেন না। মঙ্গলবার (১১ মে) ঢাকা থেকে তার মুক্তির আদেশ সংক্রান্ত নথি ফরিদপুর কারাগারে পৌঁছালে বুধবার (১২ মে) আইনি প্রক্রিয়া শেষে মুক্তি পান।
জেলা কারাগার সূত্র জানায়, বুধবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ফরিদপুর জেলা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তারা মিয়া।
এরপর দুপুরে সালথা উপজেলার নকুলহাটি বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহাব মোল্লার নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল বের করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আলিম মোল্লা, আটঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান ও ফেলু মোল্লা, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আবু মঈন বিজয় প্রমুখ। বুধবার বিকেলে তিনি একটি বিশাল গাড়িবহর নিয়ে এলাকায় ফেরেন। তার এ কারামুক্তির ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মলয় কুমার বোসকে ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মলয় বোস আটঘর ইউনিয়নের সাড়ুকদিয়া গ্রামের মৃত মনিন্দ্রনাথ বোসের ছেলে।
হত্যার দুই দিন পর ৯ ফেব্রুয়ারি মলয় বোসের স্ত্রী ববিতা বোস বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তারা মিয়াকে প্রধান আসামি করে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এ স্থানান্তর করা হয়।
মামলায় বিচার শেষে ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ নয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। এ ছাড়া একজনকে দুবছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা ছিলেন ইমামুল হোসেন তারা মিয়া (৬৫), বকুল মাতুব্বর (৩২), মিজানুর মোল্লা (২২), মামুন মাতুব্বর (২৩), হাশেম মোল্লা (৪৭), মোশারফ হোসেন মোল্লা (৩২), মনিরুজ্জামান শেখ (২৮), উজ্জ্বল বেপারী (২৮) ও বেলায়েত হোসেন বেলা (২২)।
আসামিদের মধ্যে আজাদ মোল্লা (৩৮), সোহেল মিয়া (২৬), আমিনুর মাতুব্বর (৩৬), সত্তার মোল্লা (২৫), নজরুল শেখ (২৮), নসরু খান (২৯), হাতেম মোল্লা (৪৫), অলিয়ার রহমান অলি (২৬), ইমরান মাতুব্বর (২৫), আক্কাস শিকদার (২৪), মিরাজ সরদার (২৮), সেন্টু মাতুব্বরকে (২২) যাবজ্জীবন করাদণ্ড দেয় বিচারক।
২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর নিম্ন আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া ৯ আসামির মধ্যে পাঁচজনকে ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে ৪ জনের সাজা বহাল রাখা হয় এবং বাকিদের খালাস দেন হাইকোর্ট। এ মামলায় সব মিলে সাজাপ্রাপ্ত ২১ আসামির মধ্যে নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। ১২ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর ফকিরকেও খালাস দেওয়া হয়।
বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মবিনের হাইকোর্ট এ রায় দেন।
যাদের মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় তারা হলেন উজ্জল বেপারী, মিজানুর রহমান, মামুন মাতব্বর, মনিরুজ্জামান শেখ ও বেলায়েত হোসেন।
এ ছাড়া যে চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে তারা হলেন সাত্তার মোল্লা, আক্কাস শিকদার, নজরুল শেখ ও ইমরান মাতব্বর।