অনলাইন নিউজ : ‘হঠাৎ বিস্ফোরণ। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই রক্তাক্ত হয়ে উঠলো বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। হতাহতদের আর্তচিৎকারে মুহূর্তেই বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।’ এখনো সেই অভিশপ্ত দিনের স্মৃতি আর অসহ্য যন্ত্রণা আঁকড়েই বেঁচে আছেন মাহবুবা পারভীন।
সাভার পৌর মহল্লার ব্যাংক কলোনির ৩৬-ই নম্বর বাড়িতে বসেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ সেই দুঃস্বপ্নের অসহ্য যন্ত্রণাময় ঘটনার বর্ণনা দিলেন মাহবুবা পারভীন।
এই গ্রেনেড হামলায় তার শরীরের ঢুকেছে ১৮’শ স্প্লিন্টার। আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মাহবুবা জানান, কেউ ভাবে নাই যে আমি বেঁচে আছি। ভ্যানে করে অন্য সবার সাথে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশীষ কুমার মজুমদারকে আমার পরিবারের সদস্যরা ফোন দেয়। তখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আমার লাশের খোঁজ করছিলেন। কিন্তু, দেখলেন দ্বিতীয় তলার মেঝেতে আমি পড়ে আছি। তখন তিনি আমার চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করলেন। কিন্তু স্প্লিন্টারের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত আমার অবস্থা দেখে হাসপাতালগুলো ভর্তি নিচ্ছিল না। পরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি জানান, এরপরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কলকতার পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানায় তার মাথায় ৩টা স্প্লিন্টার আছে। সেই সাথে শরীরেও প্রায় ১৮’শ স্প্লিন্টার রয়েছে।
বর্তমানে সাভার পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গণির মাধ্যমে ২০০৩ সালে রাজনীতি অঙ্গনে প্রবেশ করেন মাহবুবা পারভীন। তার পর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৪ সালে মাহবুবা ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। তবে, বর্তমান ঢাকা জেলা (উত্তরের) স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে ঢাকায় সভানেত্রীর বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতেন তিনি। ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশে মাহবুবা অংশ নিয়েছিলেন বেলা ১২ টায়। পরে বিকেল ৩ টায় সমাবেশ শুরু হয়। তবে, গ্রেনেড হামলার সময় মঞ্চের নিচে ছিলেন মাহবুবা। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় গ্রেনেড। এর কিছু সময় পর রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হবে: এটর্নি জেনারেল | The Business Standard
মাহবুবা আরও জানান, স্প্লিন্টারের ক্ষতগুলো কষ্ট দিলেও ভুলে থাকতে পারি দেশনেত্রীর শেখ হাসিনার ভালোবাসা পেয়ে। তার ভালোবাসা চেয়ে ছিলাম। তা পেয়েছি। আশা পূরণও হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছে অবমূল্যায়িত হয়েছি বার বার। অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই বলেন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাকে মূল্যায়ন করেন নি, এগিয়ে আসেন নি বিপদের সময়েও।
তবে, বয়সের সাথে সাথে নানান রোগ-ব্যাধি আর স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় দিন দিন ঘরবন্দি হয়ে পড়ছেন মাহবুবা। আক্ষেপ করে মাহবুবা পারভীন বলেন, যদি বছরের ১২টি মাসের মধ্যে আগস্ট মাসটি বাদ দেওয়া যেত তাহলে আমরা অনেকটাই শান্তি পেতাম। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের হারানোর এই মাসে যখন আমরা তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে থাকি তখন ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা আমাদের এ শোককে আরও বাড়িয়ে দেয়। ১৫ আগস্টের সূত্র ধরেই ২১ আগস্টের সৃষ্টি হয়েছে। ২১ আগস্টে আমরা আমাদের সুন্দর জীবন হারিয়ে ফেলেছি। ঘুমাতে না পেরে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। এভাবেই শারীরিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন তিনি।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার হোতা তারেক জিয়াসহ তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবির পাশাপাশি, সাভারের রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাদের কাছে যথাযথ সম্মান প্রত্যাশা করেন তিনি।