বিডি ঢাকা ডেস্ক
বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে গতকালও আন্দোলনে ছিলেন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা আতিয়ার। শ্রম ভবনের সামনে ভুখা মিছিল করেও মেলেনি বেতন-বোনাস। রাজ্যের হতাশা এখন আতিয়ারের মুখে।
তিনি বললেন, স্ত্রী সন্তানরা পথপানে চেয়ে আছে কখন বাড়ি ফিরব। এবারের ঈদটা যেন নরক যন্ত্রণার। শেষ মুহূর্তে খালি হাতে বাড়ির পথ ধরেছি। এমন দিন যেন আর কারো না আসে।
নিজ জেলা, ছবি ও গার্মেন্টসের নাম প্রকাশ না করে গাবতলীর রজব আলী মার্কেটের আই ভি পরিবহনের বাসে ওঠার অপেক্ষায় থাকা গার্মেন্টস কর্মী আতিয়ার এভাবেই ঢাকা পোস্টকে হতাশার কথা জানান।
তিনি বলেন, চাঁদ রাত আজ। এমন সময়ে কখনো বাসায় ফিরিনি। ১৪ বছর গার্মেন্টসে কাজ করছি। খালি হাতে কখনো ফিরিনি। এবার ফিরতে হচ্ছে। কথাগুলো বলতে বলতেই চোখ ছলছল করে ওঠে আতিয়ারের।বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে ঘোষণা দিয়ে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ভুখা মিছিল করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে টিএনজেড গ্রুপের তিনটি কারখানার দুই শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী অংশ নেন। যদিও টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা শনিবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত তাদের বকেয়া বেতন পাননি।কারখানার শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর শ্রম সচিব সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আপাতত তিন কোটি টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তবে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এদিকে আজ বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল সোমবার (৩১ মার্চ) সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। রোববার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় কক্সবাজারসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলার আকাশে চাঁদ দেখা যাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন সেখানকার জেলা প্রশাসকরা।
ঈদের আগের রাতেও গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দেখা যায়, নাড়ির টানে গ্রামের ফিরতে মানুষের আনাগোনা। তাদের অধিকাংশই শ্রমজীবী, জরুরি কাজে ঢাকায় আসা, তাবলিগে থাকা মুসল্লি, পরিবহন ও গার্মেন্টস খাতের শ্রমিক। আছে গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহের মতো নিকট দূরত্বের যাত্রীও।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বাসিন্দা রুবেল একটি বাসের সুপারভাইজার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ বাড়ি ফিরছি। যে বাসের সুপারভাইজার সেই বাসেই ফিরছি স্ত্রীকে নিয়ে। স্ত্রী মিরপুরে গার্মেন্টসে চাকরি করে। ওর ছুটি আরও দুদিন আগেই হয়েছে। তবে আজ একসঙ্গে ফিরছি ঈদের জন্য।
সিরাজগঞ্জে ফিরতে বাসের অপেক্ষায় ফিরোজ নামের এক যাত্রী। ১৫ দিন ধরে ঢাকায় তিনি। একটা চাকরির বন্দোবস্ত করতেই ঢাকায় আসা তার।
ফিরেজ বলেন, বাড়ি ফিরতেই হতো। তবে এই ফেরাটা সুখের। খালি হাতেই ফিরছি। তবে চাকরির সুখবর নিয়ে। অন্তত পরের ঈদটা তো ভালো যাবে, মন্দ কি।
গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, যাত্রী পেতে হাঁকডাক দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। যাত্রী আসতেই কাউন্টারগুলোর স্টাফদের দৌড়াদৌড়ি, হাঁকডাক আর টানাটানি চলছে। কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায়, ‘চান রাত ভাই, বকশিশ লাগব না, আসেন, লোকাল ভাড়ায় এসি বাসে ওঠেন।’