রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন

ব্রেন রট ॥ বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১০ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

আপনি কি উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনের মধ্যে ডুবে আছেন? বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন: ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টিকটকে একবার লগিন করলে আর বের হতে পারছেন না? কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন আপনাকে আবদ্ধ করে রাখছে! আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম, পড়ালেখা কোনো কিছুই যেন পাত্তা পাচ্ছে না এই নেশার কাছে। যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ হয় তবে আপনি ‘ব্রেন রট’ বা ‘মস্তিষ্কের পচন’ রোগে আক্রান্ত।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্রেন রট বা মস্তিষ্কের পচন বিষয়টা আসলে কি? এই শব্দটি দ্বারা মানুষের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিস্থিতির অবনতি বোঝায়। মূলত এটি দেখা দেয় স্যোশাল মিডিয়ায় সারাক্ষণ পড়ে থাকা, গুরুত্বহীন এবং নিম্নমানের কন্টেন্ট অতিরিক্ত দেখার ফলে। এই শব্দের উৎপত্তি হয় ১৮৫৪ সালে হেনরি ডেভিড থোরোর বই ‘ওয়াল্ডেন’ থেকে। আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে ইন্টারনেটবিহীন যুগে ‘ব্রেন রট’ শব্দটি ঠিক কি অর্থে ব্যবহৃত হতো? আসলে, এই বইয়ে লেখক তখনকার সময়ে মানুষের অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় করা, সমাজের জটিল ধারণাকে অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা এবং এর ফলে মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টার অবনমনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে ২০২৪ সালে এসে শব্দটি জেনারেশন আলফা এবং জেনারেশন জেডের অনলাইন সংস্কৃতির মধ্যে উদ্ভূত হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে এটি মূলধারায় পরিণত হয়েছে। অধিক জনপ্রিয়তার কারণে ২০২৪ সালের ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার এর খেতাব পেল ‘ব্রেন রট’ শব্দটি। এমনকি গত এক বছরের মধ্যে শব্দটির ব্যবহার প্রায় ২৩০ শতাংশ বেড়েছে। এর আধুনিক ব্যবহারকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ‘একজন ব্যক্তির মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থার অনুমিত অবনতি, বিশেষ করে তুচ্ছ বা চ্যালেঞ্জিং বলে বিবেচিত উপাদান যা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে দেখা হয়।’ তবে করোনাকালে এই শব্দের ব্যবহার ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। কেননা আইসোলেশনের সময় গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় বিনোদন স্বল্পতার কারণে মানুষ অধিক মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। ফলে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অকারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ে থাকে এবং তাদের মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় শর্টস, রিলস দেখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। একে বলা হয় ডুমসক্রোলিং। আর এই ডুমসক্রোলিং এর ফলাফলই হলো ‘ব্রেন রট’ বা ‘মস্তিষ্কের পচন’। মনোবিজ্ঞানী ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু প্রজিবিলস্কি বলেন, ‘শব্দটির জনপ্রিয়তা আমরা যে সময়ের মধ্যে বাস করছি তা প্রকাশ করে।’
এই ব্রেইন রটের ফলাফল যে কত ভয়ংকর আর তা থেকে মুক্তির উপায়ই বা কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রেন রটের ফলে কোন কাজে উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলা, স্মৃতিবিভ্রম, খিটখিটে মেজজ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার চেষ্টা আর কিছু অভ্যাস এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। একটি প্রবাদ আছে, “সুস্থ দেহে সুন্দর মন।” আর দেহ সুস্থ থাকলে ব্রেন রট বা মস্তিষ্কের পচন কখনই আমাদের তাড়া করতে পারবে না। এক্ষেত্রে প্রথমেই আসে ঘুমের বিষয়টি। পরিপূর্ণ ঘুম মানুষের মন এবং শরীর দুটোই ভালো রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা ফোনের প্রতি এতটাই ঝুঁকে পড়েছি যে অধিক রাত পর্যন্ত জেগে জেগে স্ক্রলিং, শর্টস, রিলস দেখছি। বিশেষত, আমাদের তরুণ প্রজন্ম ফোনের নেশায় অত্যধিক মাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। যা আমাদের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের। এছাড়া শারীরিক কসরত এবং মেডিটেশন আমাদের শারীরিক ও আত্মিক প্রশান্তি দিতে পারে। অধিকন্তু, তেল জাতীয় খাবার যতটুকু সম্ভব বর্জন করতে পারি। তাছাড়া হাতে ফোন নিয়ে রুমের মধ্যে পড়ে না থেকে বাইরে মানুষের মাঝে অধিক সময় ব্যয় করা হতে পারে একটি উত্তম পন্থা। অর্থাৎ, আমরা প্রয়োজনীয় কাজ ব্যতীত ফোন থেকে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে ‘ব্রেন রট’ সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com