অনলাইন নিউজ : রাজধানীতে ভ্যান চালান ফরিদপুরের রব্বানী সরকার। প্রতি মাসে তাকে গ্রামে যেতে হয়। আগে তাকে গুলিস্তান টু মাওয়াঘাট পৌঁছতে বাসভাড়া গুনতে হতো ১০০ টাকা। কিন্তু এখন বাসভাড়া বাড়াচ্ছে ১২৭ টাকা। হিসাবটা শুনতেই বেশ চমকে গেলেন তিনি। কপাল কুঁচকে খানিকটা চিন্তায় পড়লেন।
স্বল্প আয়ের এ মানুষটির সঙ্গে রোববার রাতে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় কথা হচ্ছিল। বাবুল বলেন, আমরা তো গরিব মানুষ। আগে মাসে দুবার গ্রামে যেতাম। এখন একবার যাওয়াও কষ্ট হবে। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, শুধু তো বাস নয়। তার গ্রামে যেতে তিনি ভ্যান, ফেরি ও সিএনজি ব্যবহার করেন। এসব বাহনের ভাড়াও বাড়ছে। কিন্তু তার তো আয় তো বাড়ল না।
আজ সোমবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে বাসভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ছে। কিন্তু এই বাসভাড়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আপাতত গণমানুষের বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের আয় বাড়ছে না। ফলে বিষয়টি অস্বস্তির ও সুখবর নয় বলে মনে করছেন তারা।
মুগদাপাড়ার মদিনাবাগের আরেক ভ্যানচালক মারুফ। শনিবার গ্রামের বাড়ি বরিশালে অসুস্থ বাবাকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু বাসভাড়া বাড়ার খবরে বেশ কষ্ট পেলেন তিনি। জানালেন, এবার অনেক স্বল্প টাকা নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন। তার ওপর হঠাৎ করেই বাসভাড়া বাড়ার খড়গ। ফলে তিনি যে বাজেটে গ্রামে যাওয়ার হিসাব কষেছিলেন তা আর মিলল না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পকেট সবাই কাটে। দ্যাশে কি দেখার কেউ নাই। শুধু সাধারণ যাত্রী কি মাশুল দিয়ে যাবে? আমি মনে করি, এই বাসভাড়ার সঙ্গে জিনিসপত্রের দামও বাড়বে। কষ্ট হবে আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এমন খবরে বেজায় অখুশি। কারণ বাসভাড়ার সঙ্গে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়বে। ফলে পুরো মাসে চলতে হিমশিম খাবেন তারা। তারা এ-ও জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে কাঁচা বাজারের দাম ও মুরগির দাম বেড়েছে। এবার তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে ঢাকায় টিকে থাকা এসব মানুষের জন্য দুরূহ হবে। গত কয়েকদিনে অনেকেই বেশি বাড়ার বাসা ছেড়ে বস্তি এলাকায় ঘর খুঁজছেন বলেও জানালেন কয়েকজন।
মগবাজারের একটি গ্যারেজে থাকেন রিকশাচালক করিম। বাসভাড়া বেড়ে যাওয়ার কথা শুনেই রেগে গেলেন তিনি। বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলে উঠলেন, ‘সরকার গরিব মানুষের কথা ভাবে না। ভাবলে বাসমালিকদের কথা শুনত না। এখন শুধু গরিব কেন, সব মানুষের খরচ বাড়বে। প্রতিদিন বাসে চড়ে অফিসে আসেন সচিবালয়ের কিসমত। বাসভাড়া বেড়ে যাওয়ায় তার খরচ বেড়ে যাবে। আর বেতনের টাকায় সংসার চলবে কী করে এখন থেকে চিন্তা চলে এলো।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো। যেন ঠিকমতো সংসার চালাতে পারেন তারা। কিন্তু যারা সরকারি চাকরি করেন না, তাদের কী হবে? এমন প্রশ্নও ছিল একটি বেসরকারি ব্যাংকে পিয়নের পদে চাকরি করা রনির।