সত্যনারায়ন শিকদার,পশ্চিমবঙ্গ : ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। কয়েককটি জেলার একই রকম ভোটগ্রহণ হলেও ভিন্ন চিত্র ছিল নন্দীগ্রামে। সেখানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূলের মমতা বন্দোপাধ্যায় ও বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। ভোট জালিয়াতির ঘটনা শুনে মমতা নন্দীগ্রামে গেলে ভোটকেন্দ্রে দুই ঘণ্টার বেশি সময় আটকা পড়েন। তৃণমূল ও বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে নিরাপত্তার কারণে তাকে আটকে থাকতে হয়। যদিও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বাহিনী তাকে উদ্ধার করে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, নন্দীগ্রামের বয়ালে সকাল থেকেই জাল ভোটের অভিযোগ উঠে। এই খবরে দুপুরে সেখানে হুইল চেয়ারে চেপে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই বুথের বাইরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
তৃণমূলের দাবি, বিজেপির লোকজন বুথে এজেন্টদের বসতে দেয়নি; তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম আনন্দাবাজার পত্রিকা জানায়, মমতাকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। এতে উত্তেজিত হয়ে যান তৃণমূল সমর্থকরাও। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরস্পরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টিও। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে রাজ্য পুলিশ এবং র্যাফ। দুই শিবিরকে আলাদা করে দেয় তারা। কিন্তু বুথের বাইরের পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায়, বুথের ভেতরই আটকে পড়েন মমতা। বিকল্প রাস্তায় মমতাকে বের করে আনতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। পরে বাধ্য হয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মানবশৃঙ্খল গড়ে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়।
সেখানে বসেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ফোন করে পরিস্থিতি জানান মমতা। নিজের জীবন শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনও মুহূর্তে যেকোনও কিছু ঘটে যেতে পারে… এখানে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।’ পরে তাকে পাহারা দিয়ে বাইরে বের করে আনে নিরাপত্তা বাহিনী।
এর কিছুক্ষণ পরই এক টুইট বার্তায় গভর্নর বলেন, কিছুক্ষণ আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ইস্যু নিরসন করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু মমতার অভিযোগ উড়িয়ে দেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘অবাঞ্ছিত কেউ যাতে বুথে না ঢোকেন, তার জন্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেবেন। তাতে অসুবিধা কোথায়! হেরে যাবেন বুঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন মমতা। নির্বাচন কমিশনকে ভরসা করা উচিত। সুষ্ঠুভাবে ভোট করানোই ওদের দায়িত্ব। আর ৮০ শতাশ জাল ভোট চাইলে ওর দলও করতে পারবে না। নিজেরা জাল ভোট করতে পারছেন না বলেই এ সব বলছেন।’
ওই বুথে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকেন মমতা। পরে দুপুর সোয়া ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহায়তায় সেখান থেকে বের হন মমতা।