বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০২ অপরাহ্ন

মেঘনায় বালু লুট: এলাকাবাসীর ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১০ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় মেঘনা নদী থেকে অবাধে লুট হচ্ছে বালু। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি চক্র অবৈধভাবে প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে। বালু লুটের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো যেমন ভাঙন ঝুঁকিতে, তেমনি বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এছাড়া চড়া মূল্যে বালুমহাল ইজারা নেওয়া বৈধ ইজারাদার প্রতিষ্ঠানও বিপাকে পড়েছে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গত ২২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটি।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও নৌপুলিশকে ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন চলছে বালু লুট। এছাড়া জেলার নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা এলাকায়ও মেঘনা নদী থেকে বালু লুট করছে রায়পুরার আরেকটি চক্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচা এলাকায় মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি বালুখেকো চক্র। প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। যার বাজারমূল্য অন্তত প্রায় ৫০ লাখ টাকা। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবাধে বালু লুট করে বিক্রি করছে ওই চক্রটি। রীতিমতো অস্ত্রে সজ্জিত ক্যাডার বাহিনীর পাহারায় দিনভর চলে বালু উত্তোলন। বালুখেকো চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন যুবদল নেতা কাইয়ূম মিয়া। তার সঙ্গে আছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। অবাধে বালু তোলার কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি, কানাইগর ও শান্তিনগর গ্রাম।

অপরদিকে, নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা এলাকায় মেঘনা নদীতে ৫-৭টি ড্রেজার দিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে রায়পুরা উপজেলার অপর একটি চক্র। স্থানীয় বিএনপির কয়েকজনকে নিয়ে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম। এই চক্রটি কয়েক মাস আগে নবীনগর উপজেলার চরলাপাং এলাকা থেকেও বালু উত্তোলন করে। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচটি ড্রেজার জব্দ করে। সম্প্রতি ড্রেজারগুলো ছাড়ানোর পর আবারও ধরাভাঙ্গা এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। এসব গ্রামের বাসিন্দারা নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়ার আতঙ্কে আছেন।

নবীনগরের চরলাপাং গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বালুখেকো চক্রটি দিনের বেলা নদীর মাঝখান থেকে বালু উত্তোলন করলেও রাতে তীর পর্যন্ত চলে আসে। এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু তোলার কারণে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়ি ও নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি। ফলে নদীর তীরে বসবাস ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে জানান তারা।

এদিকে, মেঘনা নদীর জাফরাবাদ বালু মহালটি প্রায় ৭৫ কোটি টাকায় ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারার এক বছরের মধ্যে ইতোমধ্য ৯ মাস পেরিয়ে গেছে। মূলত এই মহালে বালুর জন্য আসা ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রায়পুরার বালুখেকো চক্রটি নিজেদের কাছ থেকে বালু কেনার জন্য বাধ্য করছে বলে অভিযোগ করছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ। এর প্রতিবাদ করায় বালুমহাল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মুন্সি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে কয়েকবার এসে হামলাও চালিয়েছে ওই চক্রটি।

মুন্সি এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নবীর হোসেন বলেন, বৈধ ইজারাদার হয়েও আমরা নদী থেকে ঠিকমতো বালু উত্তোলন করতে পারছি না। সরকারি কোষাগারে যে টাকা দিয়ে মহাল ইজারা নিয়েছি, মেয়াদ ফুরিয়ে আসলেও সেই টাকা তুলতে পারছি না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি রায়পুরার ওই চক্রটি ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে বালু কিনতে বাধ্য করে। যেহেতু তাদের ইজারা মূল্য দিতে হয়নি, সেহেতু তাদের পুরোটাই লাভ।

এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। খুব দ্রুত আমরা বড় রকমের অপারেশনে যাব। যেহেতু এটি বারবার হচ্ছে, সেজন্য শাস্তিও দ্বিগুণ হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এবার আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com