অনলাইন নিউজ : মোটরসাইকেলের চাবি হারিয়ে গেছে কিংবা কোথাও রেখেছেন, খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে কোনও মেকানিকের কাছে গিয়ে হয়তো ডুপ্লিকেট চাবি বানানোর সিদ্ধান্তই নেবেন। আর সেই চাবির একটি কপি রেখে দিয়ে প্রতারণা করছে একটি চক্র। সম্প্রতি এই চোরাই মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতারের এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে প্রতিদিনই মোটরসাইকেল চুরি করে যাচ্ছে চক্রটি। বাসার গ্যারেজ, রাস্তা এবং অফিস থেকে তালা ভেঙে মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে তারা।
ডিবি বলছে, মোটরসাইকেল চোরদের সঙ্গে এই চাবি মেকানিকদের কিছু লোক জড়িত। মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ির ডুপ্লিকেট চাবি বানাতে এলে মেকানিক সেই চাবির আরেকটি কপি বানিয়ে তার কাছে রেখে দেয়। পরে সেই চাবি নিয়ে কাজে নেমে পরে চক্রটি।
গত মাসে তুরাগ এলাকা থেকে একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় তুরাগ থানার মামলার তদন্তে মোটরসাইকেল চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য মো. খালেক হাওলাদার ওরফে সাগর আহম্মেদকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি। এসময় তার কাছ থেকে ১২টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ থানা পুলিশ চোরাই মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ১০টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। তারা একই কায়দায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল।
সম্প্রতি এ ধরনের দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেফতার খালেক ১৫ বছরে ঢাকা থেকে ১ হাজার মোটরসাইকেল চুরি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছে। তাকে গ্রেফতারের পর আমরা এ চক্রের বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি।
তিনি বলেন, গ্রেফতার খালেকের সঙ্গে আরও আট থেকে সাত জনের একটি দল রয়েছে। যারা চোরাই এসব মোটরসাইকেলগুলো চাঁদপুর, নোয়াখালী ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় নিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করতো।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও হাওর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কম দামে বিক্রি হয়। এসব চোরাই মোটরসাইকেল কাগজপত্র না থাকলেও কিনে নিচ্ছেন অনেকে। আমরা বারবারই বলে যাচ্ছি, কাগজপত্র নেই এমন মোটরসাইকেল কেনা অবৈধ। চোরাই মোটরসাইকেল যার কাছে পাবো তাকেই চোর হিসেবে সাব্যস্ত করবো। কারণ চোরাই মাল কেনাও একটা অপরাধ। কেউ যদি কাগজপত্রবিহীন চোরাই মোটরসাইকেল কেনেন তাদের সবার বিরুদ্ধে আমরা আইগত ব্যবস্থা নেবো।
সবাইকে আহ্বান জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল চুরি হলেই তাৎক্ষণিক নিকটস্থ থানায় জিডি করুন। এরপর জিডির কপিটি নিয়ে আমাদের ডিবির টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা মোটরসাইকেল উদ্ধার করার চেষ্টা করবো।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি লালবাগ জোনের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘মোটরসাইকেল চোর চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন গ্যারেজ, অফিসের সামনে কিংবা পার্কিং করা জায়গা থেকে সুযোগ বুঝে গাড়ি চুরি করে নিয়ে যায়। চুরির পর দ্রুত গাড়িটি ঢাকার আশেপাশে কিংবা দূরবর্তী জেলাগুলোতে নিয়ে গিয়ে তাদের লোকজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই লোকজন আবার সাধারণ মানুষের কাছে এসব মোটরসাইকেল বিক্রি করে।’
তিনি বলেন, ‘এসব চুরির ঘটনা তদন্ত করার সময় প্রায়শই মোটরসাইকেলগুলো সাধারণ লোকদের কাছেই পাওয়া যায়। তারা কমদামে এসব মোটরসাইকেল কিনে নেয়। আর এ কারণে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলগুলোও সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। আসামি শনাক্ত করতে আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যায়। তাই এসব ঘটনা কমাতে সাধারণ মানুষকেও এসব মোটরসাইকেল কেনার বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।’