
বিডি ঢাকা ডেস্ক
শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটাতে স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগমের এবারের পোশালুতে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। এবার তিনি শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটাতে আয়োজন করেন পোশালু।
পুনর্ভবা নদী ঘেঁষা চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র রহনপুর পৌর এলাকার বাবুরঘোন মহল্লার ওই শিক্ষিকার বাড়িতে চলে এই আয়োজন। ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী এতে অংশ নেন। শনিবার পোশালুতে নানা আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুসহ গ্রামের নারীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শিশু শিক্ষার্থীরা গানের তালে নৃত্য, গান, কবিতা, নাটক, গম্ভীরা পরিবেশন করেন। এতে তারা গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরেন। অন্যদিকে গ্রামের নারীরা পোশালু উৎসবের রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করেন। তারা কেউ কেউ গল্পের তালে পোশালুর সিদ্ধ ডিম থেকে খোসা ছড়াচ্ছেন। আবার কেউ ভাত রান্না করছেন। রান্না শেষে নারীরা হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলায় অংশ নিয়েছেন। দুপুরে সকলে একসঙ্গে সারিবদ্ধ হয়ে বসে খাবার খেয়েছেন।
উত্তর রহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মমতাজ বেগম এসবের আয়োজন করেন। শিশুদের পড়ালেখার পাশাপাশি গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়ায় সংস্কৃতিগুলো তুলে ধরতে তার এ প্রচেষ্টা বলে জানান। সেই সঙ্গে তাদের মেধার মনোনিবেশ ঘটানো ছিল তার উদ্দেশ্য।
অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতি বছরের বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রিয় শিক্ষিকা মমতাম বেগম গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিগুলো তুলে ধরতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এবার তিনি শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে পোশালু উৎসবের আয়োজন করেন। তারা প্রাথমিক পর্যায়ের ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী এতে অংশ নিয়েছেন। তারা জানান, মমতাজ ম্যাডামের আন্তরিকতা তাদের মুগ্ধ করেছে। নতুন কিছু শিখতে ও জানতে পারলাম।
৫ম শ্রেণির ছাত্র নিরবসহ অন্য ছাত্ররা জানান, পোশালু কি তা আজ জানতে পারলাম। কিভাবে করতে হয় তা দেখলাম ও জানলাম। খেলাধুলার পাশাপাশি নাচ, গান, নাটিকাতে অংশ নিয়েছি। নানা-দাদাতের আমলে তারা কি করতেন সেটা আজ উপলদ্ধি করলাম।
জেলা সদর থেকে আসা সাজিদ তৌহিদ জানান, পরিবার নিয়ে এই আয়োজনে অংশ নিয়েছি। বউ ও ছেলে বেশ খুশি। ছেলে মমতাজ আপার বাড়ির উঠানে ধান রাখার কুটি প্রথম দেখল। এছাড়া তার বাড়িতে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র রেখেছেন। পুরনো আমলের সংস্কৃতিগুলো নতুনদের সামনে তুলে ধরছেন এটা প্রশংসার দাবি রাখেন তিনি। এখানে এসে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো ভেসে উঠেছে।
রহনপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হাবিবা সাত্তার জানান, এসব আয়োজন শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার বিকাশ ঘটাবে। শিশুরা হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি জানতে পারছে, কিভাবে হতো সেটা আবার জানতে পারছে। তাদের মধ্যে মনোবিকাশ ঘটছে। এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। মমতাজ বেগম গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নতুনদের কাছে তুলে ধরছেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আয়োজনে।
এ বিষয়ে শিক্ষিকা মমতাজ বেগম বলেন, গ্রামীণ সংস্কৃতি অনেকটা বিলুপ্তির দিকে। এসব নতুন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করি। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য তুলে ধরতে পোশালু উৎসব করি। গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা তাকে এ উৎসবে সহায়তা করেছেন বলে তিনি জানান।