অনলাইন নিউজ : শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জাতিসংঘ, জি-২০ এবং ওইসিডিকে এই ধরনের দূরদর্শী প্রস্তাবগুলিতে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি’বিশ্বের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রযুক্তিগত সমাধানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে একটি “সাউথ-সাউথ নলেজ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার” স্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “২০১৯ সালে বাংলাদেশ একটি ‘সাউথ-সাউথ নলেজ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার’ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। এটি আদর্শগতভাবে প্রাচ্যের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রযুক্তিগত সমাধানের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে।”
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) প্যারিস পিস ফোরাম-২০২১ এ দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি জাতিসংঘ, জি-২০ এবং ওইসিডিকে এই ধরনের দূরদর্শী প্রস্তাবগুলিতে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেহেতু বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নীত হয়েছে, আমরা অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য আমাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। যে প্ল্যাটফর্মটি আমাদের কূটনৈতিক মূল্যবোধ ভিত্তিক কাজকে সমন্বয় ও প্রসারিত করতে সাহায্য করবে এবং এটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, শান্তিরক্ষা এবং মানবিক প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে একাধিক উপায়ে সাহায্য করবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। আমরা এখন জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করছি। গ্লোবাল সাউথের প্রতি আমাদের এই প্রতিশ্রুতি দীর্ঘ দিনের।”
তিনি বলেন, “চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সাউথ-সাউথ কোঅপারেশনের ধারণা আমাদের ভাবনায় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত টেকসই উন্নয়নের ২০৩০ এজেন্ডায় তার স্থান হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সহযোগিতার উদ্যোগ বাড়ছে। অনেকে সৃজনশীল উন্নয়ন সমাধানের জন্য অপেক্ষা করছে।”
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “তবুও সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আলোচনায় আড়ালে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতায় ঐতিহ্যবাহী চিন্তাভাবনা এবং আখ্যান পরিবর্তন করা কঠিন। এ কারণে অনেক সম্ভাব্য প্রকল্পের অর্থায়ন কম হচ্ছে। ত্রিভুজাকার সহযোগিতার ধারণাও তার সম্ভাব্যতা অনুসারে নেই। এই ব্যবধান পূরণ করা প্রয়োজন।”
উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি পালনে পিছিয়ে রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক উন্নত দেশ এখনও তাদের আন্তর্জাতিকভাবে দেওয়া উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে। তাদের জন্য, সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন সহযোগিতা কার্যক্রমকে সমর্থন করা নিজস্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি উপায় হতে পারে।”
তিনি বলেন, “সাউথ-সাউথ কোঅপারেশনের জন্য জাতীয় উন্নয়নের অগ্রাধিকারে সরাসরি সাড়া দেয়ার আরও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরের অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন কর্মসূচির স্বচ্ছতা এবং ব্যয়-কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।”
টিকার বৈষম্য নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এখন বিশ্বায়নের অসম প্রতিক্রিয়ার সাক্ষী। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন আমরা দেখেছি, আন্তর্জাতিকভাবে লাখ লাখ মানুষ টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। টিকা ও চিকিৎসা সংকটের এই ব্যবধানটি বিশাল।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মতো কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের টিকার সমতা এবং গুণগতমান নিশ্চিত করার ক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে টিকা ভাগ করার জন্য, টিকার বড় ধরনের উৎপাদনে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান রয়েছে। এ জন্য ট্রিপস মওকুফ করা প্রয়োজন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা অনেক বছর ধরে অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার জন্য কাজ করছি। কৃষি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রজনন স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষুদ্র অর্থায়নে আমাদের অর্জন বিশ্বের অন্যান্য অংশে পৌঁছেছে। গত ২০ বছরে আমাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে আমরা জাতিসংঘের উদ্যোগের অধীনে আফগান জনগণের জন্য মানবিক সহায়তায় জড়িত থাকার প্রস্তাব দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবেশী দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে কয়েক বছর ধরে অবদান রাখছি। ইউএনডিপির সহায়তায়, কমিউনিটি-লেভেল ডিজিটাল পরিষেবা এবং পাবলিক সার্ভিস উদ্ভাবনের বিষয়ে আমাদের কাজ গ্লোবাল সাউথের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভাগ করা হচ্ছে। আমাদের কিছু জলবায়ু অভিযোজন পদ্ধতি উত্তরে বাড়তি মনোযোগ পাচ্ছে।”