বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০৩ অপরাহ্ন

সংস্কারের অভাবে টেংরাগিরি ইকোপার্কের বেহাল দশা, কমেছে দর্শনার্থী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

 

বরগুনার তালতলী উপজেলার সংরক্ষিত বনে নির্মিত টেংরাগিরি ইকোপার্কের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে দীর্ঘদিন ধরেই নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। ফলে বন্য প্রাণী সংরক্ষণের অভয়ারণ্য এ ইকোপার্কটির সীমানা প্রাচীরসহ দর্শনার্থীদের চলাচলের রাস্তা ও বনের ভেতরে থাকা খালের ওপর ছোট ছোট বিভিন্ন ব্রিজ ভেঙে বেহাল দশা হয়েছে। এতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। তবে ইকোপার্কটির সব সমস্যা নিরসনে খুব দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনার বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ইকোট্যুরিজম সুযোগ বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় তালতলীতে একটি ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরে দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন নামে খ্যাত টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ বনে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে টেংরাগিরি ইকোপার্কটি নির্মাণ করা হয়। পার্কের ভেতরে দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয় প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘের ইটের সড়ক, ছোট ছোট খালের ওপর নির্মাণ করা হয় বিভিন্ন আকারের কাঠ ও সিমেন্টের পটাতন দিয়ে ১৬টি ব্রিজ। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের জন্য পার্কের বিভিন্নস্থানে নির্মাণ করা হয় বিশ্রামাগার। স্থাপন করা হয় গভীর নলকূপ ও শৌচাগার। তবে দীর্ঘদিন ধরে এ সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত ইকোপার্কটির বর্তমানে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরমভাবে ভোগান্তিতে পড়ছেন দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা।

সরেজমিনে তালতলী টেংরাগিরি ইকোপার্ক ঘুরে দেখা যায়, ইকোপার্কে প্রবেশের আগে একটি ছোট নদীর ওপরে থাকা একমাত্র সংযোগ সেতুর মাঝের অংশের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে ঝুঁকি নিয়েই ছোট একটি খেয়া পার হয়ে ইকোপার্কে প্রবেশ করতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। প্রবেশের পর ঘুরে দেখতে পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য নির্মিত ইটের তৈরি রাস্তাটির অধিকাংশ জায়গা থেকে উঠে গেছে ইট। ফলে রাস্তার বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ। এছাড়া সরে গেছে বনের মধ্যে থাকা ছোট ছোট খালের ওপর নির্মিত ব্রিজের কাঠ ও সিমেন্টের পাটাতন। যা আছে তারও অবস্থা নাজুক, যে কোনো সময়েই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে স্থাপন করা বিশ্রামাগারগুলো যেন এক একটি ময়লার ভাগাড়। শৌচাগারগুলোর দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়াসহ দরজা জানালা, বেসিন ভাঙা এবং ঝড়ের সময় বিভিন্ন গাছ পড়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। একই অবস্থায় অকেজো হয়ে আছে স্থাপন করা গভীর নলকূপগুলো। এছাড়া বনের ভেতরে হরিণসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর নিরাপত্তায় নির্মিত বেষ্টনী ভেঙে গেছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে ইকোপার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের।

তালতলীর কড়ই বাড়িয়া নামক এলাকার স্থানীয় এক দর্শনার্থী মো. মাহমুদুর রহমান হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্রিজ না থাকায় খেয়া পার হয়ে টিকিট সংগ্রহ করে ইকোপার্কে প্রবেশ করেছি। ছোটবেলায় একবার এসেছি, দ্বিতীয়বার আবার এসে দেখলাম। এখানে বসার জন্য যে জায়গা তৈরি করা হয়েছে তা ভাঙা। রাস্তা, সেতু এবং পার্কের ভেতরে দেয়ালগুলোও ভাঙা। ইকোপার্কের যে অবস্থার হয়েছে তাতে সংস্কার করে দর্শনার্থীদের ভ্রমণ উপযোগী করা ছাড়া উপায় নেই।

মো. মুমিনুল কুয়াকাটা থেকে ঘুরতে এসেছেন বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য টেংরাগিরি ইকোপার্কে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কুয়াটার বাসিন্দা। বরগুনার তালতলীতে টেংরাগিরি ইকোপার্কে ঘুরতে এসেছি। এখানেও দেখার অনেক কিছু আছে। তবে পার্কের ভেতরে প্রবেশের পর দেখলাম বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য যে বেষ্টনী দেয়াল দেওয়া হয়েছে তা বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা।

অবসর সময়ে বাচ্চাদের নিয়ে ইকোপার্কে ঘুরতে এসে শিমুল জান্নাত নামে আরেক দর্শনার্থী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে প্রবেশ করতে নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় নৌকায় পার হতে হয়। এতে অনেক সময় বাচ্চারা ভয় পায়। ভেতরের রাস্তা ভাঙা থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে চলাচলেও অসুবিধা হয়। বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য যে বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে তাও ভেঙে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন গাছে জঙ্গল হয়ে থাকায় তা পরিষ্কার না করায় দূর থেকে কোনো প্রাণীই এখন দেখা যায় না। কুমিরের খাঁচারও একই অবস্থা।

ইকোপার্কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে বনবিভাগের তালতলী উপজেলার রেঞ্জ অফিসার মো. মতিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবশেষ ঘূর্ণিঝড় রেমালে টেংরাগিরি ইকোপার্কের বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। তবে সেগুলো সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ পেলেই আমরা কাজ শুরু করব। এছাড়া হরিণ বেষ্টনীর বিভিন্ন জায়গার প্রায় ৬০ ফুট দেয়াল ভেঙে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সব ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি বরাদ্দ পেলেই পুনরায় রাস্তাঘাটসহ সব প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, টেংরাগিরি ইকোপার্কটি একদিকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণের কাজ করে, পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের জন্য বরগুনায় এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী একটি এরিয়া। এখানে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক ঘুরতে আসে। বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ইকোপার্কের যে সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার মাধ্যমে আমরা দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com