নিউজ ডেস্ক : ফসলের জমি নষ্ট করে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের পাইকশা গ্রামের স্কুলশিক্ষক মাহমুদ কামালকে নানান ধরনের হুমকি আর হামলা-মামলা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
মাহমুদ কামাল পাইকশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
আর যিনি তাকে মোবাইলে হুমকি দিচ্ছেন তিনি গোলাম মোস্তফা। তিনি কটিয়াদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি।
স্থানীয়রা জানান, কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের পাইকশা গ্রামে ফসলের জমি থেকে গত কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট।
এলাকার প্রভাবশালী মেহেদি হাসান, সাফির উদ্দিন, মো. শাহজাহানসহ সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিয়ম-নীতি না মেনে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলের জমিসহ সড়ক, কালভার্ট। গ্রামবাসীর প্রতিবাদেও বালু উত্তোলনকারীদের থামানো যাচ্ছে না। মাহমুদ কামাল ওই গ্রামেরই ছেলে। তাই গ্রামবাসীর প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
২০১৯ সাল থেকে বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা তৎপরতা শুরু করে। ওই সময় মাহমুদ কামাল কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
ইউএনও ঘটনা তদন্তের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও সহকারী তহশীলদারকে নিয়ে কমিটি করে দেন। কমিটি এলাকায় তদন্তে গেলে তাদের উপস্থিতিতেই মাহমুদ কামালকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় কটিয়াদী থানায় জিডি করেন তিনি।
এ ঘটনার পর থেকে প্রভাবশালীরা উঠে পড়ে লাগে কামালের বিরুদ্ধে। একদিনে তিনটিসহ তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও নারী নির্যাতনের ৫টি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কামাল। আইনের আশ্রয় নেয়ারও সাহস পাচ্ছেন না।
মাহমুদ কামাল বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমার নামে ৫টি মিথ্যা মামলা হয়েছে। তবে সবকটি মামলা আদালত মিথ্যা বলে খারিজ করে দিয়েছেন। কিন্তু প্রভাবশালীরা আমার পেছনে লেগেই আছে। হত্যার হুমকি নিয়ে একপ্রকার পালিয়ে আছি। মামলা বা জিডি করলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’
এলাকাবাসী জানান, কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি আবারও শুরু হয় অবৈধ বালু উত্তোলন।
গত ২৭ জুন শিক্ষক মাহমুদ কামাল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে তাকে ফোনে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে হত্যার হুমকি।
এর আগে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং শিক্ষক মাহমুদ কামালকে হুমকির প্রতিবাদে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কটিয়াদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘স্কুলশিক্ষক মাহমুদ কামালের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। তার সঙ্গে জমি নিয়েও কোনো বিরোধ নেই। বালু ব্যবসার সঙ্গে আমি বা আমার লোক জড়িত না। আমার দলের লোকজনের সঙ্গে সে খারাপ ব্যাবহার করেছে এ জন্য বকা দিয়েছি। তবে এটা আমার ঠিক হয়নি।’