রাজশাহী সংবাদদাতা : ছিলেন শিক্ষকতা পেশায়। কিন্তু আদতেই তারা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে ব্ল্যাকমেল করতেন। হাতিয়ে নিতেন নগদ অর্থ। এমন কাণ্ডে যুক্ত দুই নারীকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ।
তারা হলেন, নওগাঁর মান্দা উপজেলার বালিচ গ্রামের মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী আইরিন ইয়াসমিন লিজা (৩৪) ও ঢাকার সাভার থানার ডেন্ডাবর নতুনপাড়া পলাশবাড়ী গ্রামের ফিরোজের মেয়ে শামীমা আক্তার (২৪)। দুজনেই সাভারের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।
রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে বোয়ালিয়া মডেল থানার পুলিশ।
মজিবুর রহমান নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনাবাহিনীর সার্জেন্টকে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর উপশহরের দুই নম্বর সেক্টরের একটি ভাড়া বাসা থেকে অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মজিবুর রহমান নগরীতে প্লট কেনাবেচা এবং রেন্ট-এ-কার ব্যবসা করতেন।
নগর পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন তার বাসায় স্ত্রী-সন্তান কেউই ছিলেন না। সেদিন বাসা থেকে নগদ ৪ লাখ টাকাসহ ওই সেনা সদস্যের মোবাইল ফোন খোয়া যায়। এ নিয়ে মৃতের ছেলে বোয়ালিয়া মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দুই শিক্ষিকার সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ দফতরে অভিযানের আদ্যপাত জানান নগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। তিনি বলেন, শিক্ষকতা পেশার আড়ালে এ দুই নারী মানুষকে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে আইরিন জানিয়েছেন, মজিবুর রহমানের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি তারা দুজন স্বেচ্ছায় মজিবুরের বাড়ি এসেছিলেন। রাতে তারা মজিবুরের পাশের ঘরে শুয়েছিলেন।
তখন মজিবুর রহমান ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে আইরিনকে তার ঘরে ডাকেন। আইরিন না গেলে ম্যাসেঞ্জারেই তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর মজিবুর জানান, রাত ৩টার মধ্যে আইরিন না গেলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। তখন আইরিন ম্যাসেঞ্জার এবং এসএমএসের মাধ্যমে মজিবুর রহমানকে মরতেই বলেন।
পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গ্রেফতারকৃতরা মজিবুর রহমানকে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে দেখেন। এসময় তারা মোবাইল ফোন, বাড়ির চাবি এবং নগদ চার লাখ টাকা ও কিছু কাগজপত্র নিয়ে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে মজিবুরের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
অপমৃত্যুর মামলা তদন্তে নেমে ওই দুই নারীর সম্পৃকতা পায় পুলিশ। এরপর একে একে তাদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় মজিবুর রহমানের খোয়া যাওয়া ফোন। পরে তাদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া মডেল থানায় নিয়মিত মামলা রজু হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান আরএমপি কমিশনার।