নোয়াখালী সংবাদদাতা : নোয়াখালীর হাতিয়ার আঠারবেকী তরুদ্দিন গ্রামের রাসেল মাহমুদ ছয় বছর ধরে ইরাকে শ্রমিক হিসাবে অবস্থান করছেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রোকেয়া খাতুন নামে এক নারীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসআপে কথোপকথন হতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রোকেয়া রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকার একটি নারী হোস্টেলে থাকেন। পাশাপাশি ধানমন্ডি এলাকার একটি বুটিক হাউজে বিক্রয় কর্মী হিসাবে চাকরি করেন। বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট থানার চর শিমুলিয়া গ্রামে।
মাস খানেক ধরে ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথন হওয়ার পর তাদের মধ্যে ভিডিওতে দেখা সাক্ষাৎ হতে থাকে। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্ম হয় যে কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না। তখন রোকেয়া রাসেলের কাছে পারিবারিক প্রয়োজনে ৫০ হাজার টাকা ধার চায়। রাসেল দিতে অস্বীকার করলে রোকেয়া অনুনয় করেন। এক পর্যায়ে রাসেল রাজি হন। তিনি ঢাকায় বসবাসকারী তার ছোট ভাই আয়াত হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা রোকেয়ার কাছে পৌঁছে দিতে বলেন। রোকেয়া টাকা হাতে পাবার এক সপ্তাহ পর ধারের টাকা আয়াতের কাছে পরিশোধ করে দেন। এতে রোকেয়ার প্রতি রাসেলের আস্থা বেড়ে যায়। তাদের মধ্যে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ হতে হতে গভীর প্রেমের সম্পর্ক হয়। ইরাক থেকেই রাসেল বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু রোকেয়া তাকে জানায় যে এখন তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। রাসেল বলেন, ২০২১ সালের শেষের দিকে তিনি বাংলাদেশে আসবেন। তখন তিনি বিয়ে করবেন। এই সময়ে মধ্যে রোকেয়ার হোস্টেল খরচ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় তিনি বহন করবেন।
রোকেয়া ধানমন্ডির একটি বুটিক হাউজের বিক্রয়কর্মী। পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরি করার চেয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা ভাবনা করেন তিনি। নিজেই একটি বুটিকের দোকান দিবেন বলে রাসেলকে জানান। রাসেল তখন রাজি হয়ে ব্যবসার জন্য ৫ লাখ টাকা তার ভাইয়ের মাধ্যমে রোকেয়ার কাছে পাঠিয়ে দেন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যবসায় আরও বিনিয়োগের জন্য কয়েক ধাপে মোট ২ লাখ টাকা পাঠান। মার্চ মাস থেকে রোকেয়ার ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভ হয়ে যায়। এরপর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। রাসেল তার ছোট ভাই আয়াতকে পাঠিয়ে দেন লালমাটিয়া এলাকায় রোকেয়ার খোঁজ করতে।
রাসেলের ছোট ভাই আয়াত বলেন, ‘রোকেয়া নামক ওই নারী বিবাহিত। শাহরিয়ার সাব্বির শিমুল নামে এক ব্যক্তি তার স্বামী। রোকেয়া লালমাটিয়ার নারী হোস্টেলে থাকলেও শিমুল একটি মেসে থাকেন। রোকেয়া ওই ৭ লাখ টাকা ব্যবসার জন্য তার স্বামীকে দিয়েছেন।’
আয়াত আরও বলেন, রোকেয়ার সঙ্গে দেখা করে ভাইয়ের পাঠানো ৭ লাখ টাকা ফেরত চাই। তখন ওই নারী বিষয়টি বেমালুম চেপে যায়। তাকে বলে, ‘আমার কাছে যে ৭ লাখ টাকা দিয়েছ, তার কি প্রমাণ আছে? প্রমান থাকলে থানায় মামলা করো। মামলায় যদি প্রমাণ হয় তবেই আমি ৭ লাখ টাকা দিব।’ তিনি বলেন, উপায় না পেয়ে আমি পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করি। ওই অভিযোগ নিয়ে পুলিশ তদন্তে নামে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মাহিন ফরাজী বলেন, ‘তদন্ত করে দেখতে পেয়েছি যে ইরাক থেকে রাসেল মাহমুদ ওই নারীকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত যাবতীয় খরচ বহন করবেন। এর সুবাদে রোকেয়া খাতুন তার তিন সহযোগী শাহরিয়ার আহমেদ, রেজাউল হক ও খাইরুল বাশারের সহায়তায় প্রথম দফায় ৫ লাখ টাকা নেন। এরপর তারা রোকেয়ার বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। পরবর্তীতে রোকেয়ার স্বামী শাহারিয়ার ইরাকে অবস্থানরত রাসেলের হোয়াটসআপে বিয়ের কাবিননামা পাঠিয়ে দেয়।
সহকারী কমিশনার আরও বলেন, তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন হওয়ায় ভিকটিমের ছোট ভাই আয়াত হোসেনকে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার অথবা মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইরাকে অবস্থানরত রাসেল মাহমুদ বলেন, ইরাক থেকে দেশে ফিরলে আর আসা যাবে না। তাই সঞ্চিত অর্থ ব্যবসার জন্য রোকেয়াকে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি সর্বশান্ত। দেশে ফিরে তার বিরুদ্ধে মামলা করব।
রোকেয়া খাতুনের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, রোকেয়া খাতুন তার ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন।