শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন

লঞ্চ অভিযান-১০-এর আগুন: ফেঁসে যাচ্ছেন মালিক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ২১২ বার পঠিত
লঞ্চ অভিযান-১০-এর আগুন: ফেঁসে যাচ্ছেন মালিক
ফাইল ফটো

অনলাইন নিউজ : লঞ্চ অভিযান-১০-এর ইঞ্জিন থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য। আগুন নিয়ন্ত্রণে ইঞ্জিন কক্ষের লোকদের যথেষ্ট গাফিলতি ছিল। ইঞ্জিনের পাশে থাকা ১৩ ব্যারেল ডিজেলে অগ্নিকাণ্ডের পর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে লঞ্চটি। চতুর্দিকে প্রাণ বাঁচতে আকুতি। কীভাবে আগুন লাগল, আগুন এত দ্রুত কীভাবে ছড়াল, কৌতূহলী এসব প্রশ্নে প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ আবার বলছেন, আগুনের সূত্রপাত লঞ্চের ক্যান্টিনে থাকা এলপি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে।

তবে লঞ্চটির মালিকপক্ষের দাবি, লঞ্চের দোতলায় কোনো কিছুর বিস্ফোরণ থেকেই আগুন। লঞ্চটির মালিক হামজালাল শেখ বলেন, ইঞ্জিনরুম বেশি পুড়েছে তার কারণ হচ্ছে সেখানে ৬ হাজার লিটার (১৩ ব্যারেল) তেল ছিল। তবে ইঞ্জিনে কোনো ত্রুটি ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের (বরিশাল বিভাগ) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইঞ্জিন কক্ষের কাছে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত অবস্থায় ছিল। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। দুর্ঘটনায় র্যাবের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, ইঞ্জিন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে তারা ধারণা করছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ, ঝালকাঠি প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করেছ। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটিগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটি। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঝালকাঠি শহরের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় তিন তলা লঞ্চটিতে হঠাত্ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুতই আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে যায়। শীতের রাতে লঞ্চের বেশির ভাগ যাত্রী তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছেই। শতাধিক যাত্রী দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হতাহত যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রথম দিনে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিশ্চিত হয়েছেন, ইঞ্জিন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ইঞ্জিন ত্রুটিপূর্ণ ছিল। আগুন লাগার পর ইঞ্জিন কক্ষের লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। এমভি অভিযান-১০-এর ফিটনেস সনদে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এতে ২০টি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ছিল। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর এগুলো ব্যবহার করা হয়নি।

যাত্রীরা বলেন, লঞ্চটির ইঞ্জিনের ত্রুটি ছিল। ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে যাত্রার আগেই ত্রুটি ধরা পড়ে। লঞ্চটি চালু হওয়ার পর ইঞ্জিন গরম হয়। গরমের তীব্রতা বেশি হওয়ার কারণে চট বিছিয়ে দেয় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।

লঞ্চের কয়েক জন কর্মী জানিয়েছেন, তৈরির পর থেকেই ভাগ্য সহায় হয়নি লঞ্চ অভিযান-১০-এর। ২০২০ সালে তৈরির পর মহামারির ধাক্কায় লঞ্চটি ট্রিপে যেতে পারেনি। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর যখন থেকে ট্রিপে যেতে শুরু করল, তখন দেখা যায় ইঞ্জিন ঠিকমতো কাজ করছে না। ফুল আরপিএম এ ইঞ্জিন চালিয়ে ও দেখা যাচ্ছে লঞ্চ গতি পায় না। বিষয়টির জানানোর পর মালিকপক্ষ লঞ্চের ইঞ্জিন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। চলতি বছরের নভেম্বরে লঞ্চটি মাদারীপুরের একটি ডক ইয়ার্ডে তোলা হয়। আগের ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি হর্সপাওয়ারের দুটি রিকন্ডিশন্ড ডাইহাটসু মেরিন ইঞ্জিন লাগানো হয়। নতুন ইঞ্জিন লাগিয়ে চলতি মাসেই যাত্রী পরিবহনে নিয়মিত হয় লঞ্চটি। নতুন ইঞ্জিন লাগানোর পরও নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য লঞ্চের সার্বক্ষণিক টেকনিশিয়ান থাকতেন বলে জানান কর্মীরা।

এদিকে, নৌ-অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই অভিযান-১০-এর দুটি ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়। এই ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন লঞ্চটির মালিক। আইন অমান্য করে ইঞ্জিন পরিবর্তন করায় নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশিদ ইত্তেফাককে বলেন, লঞ্চের ইঞ্জিন পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন পরিবর্তনের আগে অনুমতি নেওয়া হয়নি। আইনানুযায়ী এ বিষয়ে মামলা করবে অধিদপ্তর।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর লঞ্চটিকে তীরে ভেড়াতে ৪৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই লঞ্চটিকে তীরে ভেড়ানো সম্ভব হলে প্রাণহানি এড়ানো যেত বলে মনে করছেন তারা। যাত্রীদের অভিযোগ, আগুন জ্বলার পর এগিয়ে যেতে থাকে অভিযান-১০, এক পর্যায়ে পুরো লঞ্চ পরিণত হয় অগ্নিকুণ্ডে। লঞ্চটি তখন ঝালকাঠির দিয়াকুল গ্রামের পাশে। ঐ লঞ্চের সুপারভাইজার ছিলেন আনোয়ার। নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

এ বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, লঞ্চের মাস্টার তীরে ভেড়ানোর চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। ইঞ্জিন বন্ধ করে মাস্টার খলিল বুদ্ধি করে নদীর তীরের কাছাকাছি আনে লঞ্চটি। কিন্তু তীরে ধাক্কা খেয়ে আবার মাঝ নদীর দিকে ভেসে যায়। তখন অনেকে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা পায়। লঞ্চ ভাসতে ভাসতে ঝালকাঠির কাছে নদীর ওপারে চলে যায়। আধা ঘণ্টা পর স্থানীয়রা দুটি ট্রলার নিয়ে এগিয়ে আসে এবং ঐ দুই ট্রলারেও কিছু মানুষকে উদ্ধার করে। ট্রলার দুটি লঞ্চের নিচের ডেকে কিংবা সামনে যারা ছিল, তাদেরকে উদ্ধার করতে পেরেছে। কারণ দোতলা বা তিন তলায় কেবিনে বা পেছনে যারা আটকা পড়েছিল, তাদের নামার কোনো সুযোগ ছিল না।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com