আন্তর্জাতিক নিউজ : ভারতে একটি অ্যাপের মাধ্যমে ১০০ জনের বেশি মুসলমান নারীর ছবি আপলোড দিয়ে তাদের ‘বিক্রি’ করা হচ্ছে’, এমন বিজ্ঞাপন দেয়ার পর দেশটির দুইটি রাজ্যের পুলিশ ওই অ্যাপের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
অ্যাপটির ডেভেলপার এবং যিনি এর টুইটার হ্যান্ডেলে ছবি ও বিষয়বস্তু শেয়ারের দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। বুল্লি বাই নামের এই অ্যাপটি একটি ওপেন সোর্স অ্যাপ, যা গিটহাব নামে একটি ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অপারেট করত। মামলা হওয়ার পর গিটহাব কর্তৃপক্ষ এর কন্টেন্ট নামিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে ভারতে মুসলমান নারীদের অনলাইনে ‘নিলাম’ বা ‘বিক্রি’র মত হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের এটি দ্বিতীয় ঘটনা।
বুল্লি বাই কিংবা সুল্লি ডিলস কোন ক্ষেত্রেই, সত্যিকার অর্থে বেচাকেনা ছিল না, কিন্তু এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান মহিলাদের ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করে তাদের হেয় করা এবং অপমান করা। সুল্লি শব্দটি একটি মানহানিকর হিন্দি স্ল্যাং যা ভারতের ডানপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো মুসলমান নারীদের ট্রল করার জন্য ব্যবহার করে। বুল্লি শব্দের অর্থ নিন্দনীয়।
ওই অ্যাপে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, একজন পুরস্কার বিজয়ী বলিউড অভিনেতা এবং এমনকি ২০১৬ সালে নিখোঁজ হওয়া একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মায়ের নাম ও ছবি দেয়া হয়েছিল। যাদের ছবি আপলোড করা হয়েছে অ্যাপে তাদের অনেকেই টুইট করেছেন যে তারা ‘মানসিক আঘাত’ পেয়েছেন এবং প্রচণ্ড ‘আতঙ্কিত’ বোধ করেছেন।
এদিকে, সুল্লি ডিলস মামলা দায়ের পর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ভারতের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শনিবার বলেছেন যে ওই অ্যাপটি যারা আপলোড করেছে গিটহাব তাদের ব্লক করেছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পুলিশ সাইবার সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করছে।
শিবসেনা দলের একজন আইনপ্রণেতা প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এই ঘটনার টুইট করেছেন, “প্ল্যাটফর্ম ব্লক করার পাশাপাশি এই ধরনের সাইট তৈরি করা অপরাধীদের শাস্তি দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।” দেশটির জাতীয় মহিলা কমিশন টুইট করেছে যে সংস্থাটির চেয়ারপারসন দিল্লি পুলিশ কমিশনারকে এই মামলায় নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে ‘শীঘ্রই’ সবাইকে জানাতে বলেছেন। এ ঘটনার সমালোচনা করে দেশটির রাজনীতিবিদ এবং অধিকার কর্মীদের অনেকে টুইট করেছেন।
ভারতে অনলাইন হয়রানি নিয়ে ২০১৮ সালের অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোন নারী যত বেশি সোচ্চার বা উচ্চকন্ঠ হবেন, তার লক্ষ্যবস্তু হওয়ার আশংকা তত বেশি, আর তিনি যদি ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর বর্ণের মহিলা হন তাহলে এর মাত্রা আরো বেড়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে রাজনৈতিক পরিবেশ জটিল মেরুকরণ হয়ে যাওয়ার কারণে মুসলমান মহিলাদের বিরুদ্ধে ট্রোলিং পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। লেখক এবং ভারতে অ্যামনেস্টির সাবেক মুখপাত্র নাজিয়া এরাম সুল্লি ডিলস ঘটনার পরে বিবিসিকে বলেছিলেন, “এই টার্গেটেড এবং পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে আসলে শিক্ষিত মুসলমান মহিলা যারা নিজেদের মত প্রকাশ করেন এবং ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের কন্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেয়ার একটি প্রচেষ্টা।” সূত্র: বিবিসি।