বিনোদন নিউজ : উৎসবমুখর পরিবেশে এফডিসি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৫টা ১২ মিনিট পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৪২৮ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩৬৫ জন। এদিন সকাল থেকে এফডিসির মূল ফটকের সামনে শিল্পী আর উৎসুক জনতার ঢল নামে। জনতার এ ঢল মধ্যরাত পর্যন্ত দেখা যায়। ভেতরে ছিল শিল্পীদের মিলনমেলা। সুন্দর পরিবেশে প্রার্থীরা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, ভোট চেয়েছেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা চোখে পড়েনি।
তবে দুপুরের দিকে ভোটারদের অর্থ প্রদান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আনেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নায়িকা নিপুণ। তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা অনেকক্ষণ ধরেই শুনেছি এফডিসির প্রবেশপথ থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ভোটারদের টাকা দিয়েছেন জায়েদ খান। বারবার নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেও এর প্রতিকার পাইনি। এ জায়গায় দাঁড়িয়ে ভোট চাওয়াই নিষেধ। এরা ভোট চাইছে, টাকা দিয়েছে।’ নিপুণ প্যানেলের সদস্য পদপ্রার্থী নায়ক ফেরদৌস বলেন, ‘আমিও দেখেছি জায়েদ ও তার কয়েকজন কর্মী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন।’
এদিকে নিপুণের অভিযোগ অস্বীকার করে জায়েদ খান বলেন, ‘এখানে যা হচ্ছে সব প্রকাশ্যে। সবাই ভোট চাইছে ভোটারদের কাছে। জড়িয়ে ধরছে, কথা বলছে। এটাকে তারা টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে ভাবছেন। এগুলো ছোট মানসিকতা। ঠিক না। গণমাধ্যমের সবাই দাঁড়ানো ছিল। সব দেখছেন, বুঝছেন। সিসি ক্যামেরাও আছে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা ঠিক নয়। এতে নির্বাচনের ইমেজ নষ্ট হয়।’
নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী উল্লেখ করে নিপুণ বলেন, ‘জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। আমার মধ্যে কোনো চাপ অনুভব হচ্ছে না। নির্বাচনের পরিবেশ খুবই ভালো ছিল। শিল্পীরা আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পেরেছেন। এতেই আমরা খুশি।’
তবে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জায়েদ খানকে বেশ চিন্তিত দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আমাকে নিয়ে নানা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আমি কারও সঙ্গে কথা বললেই দোষ খুঁজে বের করা হচ্ছে। একটা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছি। তবে আমি শিল্পীদের ওপর আস্থা রেখেছি। তারা আমাকে নিরাশ করবে না।’
ভোটকেন্দ্রের পাশেই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দুই প্যানেলের দুই সভাপতি প্রার্থী ইলিয়াস কাঞ্চন ও মিশা সওদাগরকে দেখা গেল। ভোটের লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে খোশগল্প করতে দেখা গেল এই দুই তারকাকে। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে দুজনকে বেশ হাস্যোজ্জ্বল লাগছিল। এ সময় গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ভোট কীভাবে করতে হয়, প্রার্থীদের আচরণ কেমন হবে, তা আমাদের দুই সভাপতি প্রার্থীর আচরণে বলে দিচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট হচ্ছে, এটাই শিল্পীদের পরিচয় দেয়।’ এ সময় মিশা সওদাগর বলেন, ‘কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে নির্বাচন করতে পেরে আমি সম্মানিত। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ, ভালো অভিনেতা। তবে আমি জয়ের ব্যাপারে ৬০ ভাগ আশাবাদী।’ মিশা সওদাগরের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘শিল্পীরা সবাই খুব ভালো অভিনয় করে। যারা ভালো অভিনয় করে, তাদের ব্যাপারে আগেই কিছু বলতে চাই না। আমি ভোটের ফলাফলে বিশ্বাসী।’
ভোট দিয়ে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের চিত্রনায়ক শাকিল খান বলেন, ‘এখানে শিল্পীদের একজন অভিভাবক দরকার, যিনি শিল্পীদের টেককেয়ার করতে পারবেন। আমি সেই টিমে থাকতে পারলে, শিল্পীদের যদি কোনো কাজে আসতে পারি, ভালো লাগবে।’
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকেই এফডিসিতে নির্বাচন উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ভেতরে শিল্পীদের মিলন মেলা হলেও চলচ্চিত্রের ১৭ সংগঠনের মধ্যে ছিল চাপা ক্ষোভ। কারণ গত ২৭ জানুয়ারি সিদ্ধান্ত ছিল শিল্পী সমিতির ভোটার, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট লোকজন এবং নিবন্ধিত গণমাধ্যম ছাড়া আর কেউ এফডিসিতে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু রাতে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। পরবর্তীতে নির্বাচনের দিন সকালে দেখা যায় পূর্বের সিদ্ধান্তই বলবৎ রয়েছে। সকাল থেকে পরিচালক, প্রযোজক ও অন্যান্য সংগঠনের সদস্য এফডিসিতে এসে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে গেট থেকেই ফেরত যান। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
এদিন প্রথম ভোট দিয়েছেন ডা. এজাজুল ইসলাম। এরপর ভোট দিতে এসেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, আলমগীর, আনোয়ারা, ডলি জহুর, অপু বিশ্বাস, আমিন খান, আঁচল, বিপাশা কবির, তমা মির্জা, পিয়া জান্নাতুল, শহীদুজ্জামান সেলিমসহ অনেকে।
এবার নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশ নিয়েছে। একটি কাঞ্চন-নিপুণ ও মিশা সওদাগর এবং সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান প্যানেল। ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ, সহসভাপতি রিয়াজ আহমেদ ও ডি. এ তায়েব, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনুর, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন, দফতর ও প্রচার সম্পাদক আরমান, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক মামনুন হাসান ইমন ও কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচন করবেন অভিনেতা আজাদ খান। কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন অমিত হাসান, ফেরদৌস, শাকিল খান, নানা শাহ, আফজাল শরীফ, সাংকো পাঞ্জা, জেসমীন, কেয়া, পরীমণি, গাঙ্গুয়া ও সীমান্ত।
অন্যদিকে মিশা-জায়েদ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সভাপতি মিশা সওদাগর এবং সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও রুবেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত, সাংগঠনিক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জয় চৌধুরী, দফতর ও প্রচার সম্পাদক জেকে আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ। এ প্যানেলের কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন- রোজিনা, অঞ্জনা, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী, আসিফ ইকবাল, বাপ্পারাজ, আলীরাজ, নাদের খান ও হাসান জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন অভিনেতা ডন ও হরবোলা।প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন পীরজাদা শহীদুল হারুন। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে রয়েছেন বিএইচ নিশান ও বজলুর রাশেদ চৌধুরী।