বিডি ঢাকা ডেস্ক
গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নওগাঁর প্রধান দুটি নদী ছোট যমুনা ও আত্রাইসহ অন্যান্য নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আত্রাই ছোট যমুনার পানি বিপদসীমার অনেক নীচে অবস্থান করছে। এদিকে নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলে একটু বৃষ্টিতে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে।
জানা যায়, ৮০ দশকে আত্রাই নদীর পাশ দিয়ে নির্মিত হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। যা দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ার কারণে এবং প্রতিটি বাঁধে শিয়াল, বেজি কিংবা ইদুরের গর্ত থাকার কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই সেই লিকেজ দিয়ে পানি চলাচল করায় অনেক স্থানে হঠাৎ করেই ধ্বস দেখা দিয়েছে।
তবে লিকেজ কিংবা ধ্বসে যাওয়া স্থানগুলো সঙ্গে সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টিমের প্রত্যক্ষ তৎপরতায় মেরামত/বন্ধ করার কারণে আত্রাই উপজেলার শত শত গ্রাম বন্যা কবলিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ধ্বসে যাওয়া স্থানগুলো স্থানীয় সাংসদ অ্যাড. ওমর ফারুক সুমন পরিদর্শন করেছেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দিন-রাত কাজ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া বাঁধগুলো মেরামত করে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেগুলো সচল করায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার (৪জুলাই) রাতে আত্রাই থেকে নাটোরের সিংড়ার সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়কের শিকারপুর এলাকায় গুড় নদীর বাঁধ কাম পাকা সড়ক ধ্বসে যায়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন শুক্রবার ধ্বসে যাওয়া বাঁধ কাম সড়ক মেরামত করে। এরপর শুক্রবার রাতে ঐ ভাঙ্গনের প্রায় এক কিলোমিটার পূর্বদিকে বৈঠাখালির ডুবাই নামক স্লুইচগেট সংলগ্ন স্থানে পাকা সড়ক ধ্বসে যায়। এতে ওই সড়কে যানবাহনসহ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
এছাড়া শনিবার সকালে উপজেলা সদরের পশ্চিম এলাকায় আত্রাই-বান্দাইখাড়া সড়কের লালুয়া নামকস্থানে বাঁধ কাম পাকা সড়ক ধ্বসে যায়। এতে উপজেলা সদরের সাথে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত মঙ্গলবার (৯জুলাই) সকালে আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের গুড়নৈ নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধ্বস দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ভবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টিম মেরামতের কাজ করে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেই ধ্বসে যাওয়া অংশটি মেরামত করে যান চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেয়।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ফয়জুর রহমান বলেন এবার আমার টিম সব সময় বাঁধে অবস্থান করছে যেকোনো ধরনের ভাঙ্গন দেখা দিলে সাথে সাথে কাজে নেমে যাচ্ছে। নওগাঁয় প্রায় ৫শতাধিক কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ রয়েছে। জনবল সংকট নিয়ে এতো দীর্ঘ বাঁধ সব সময় পর্যবেক্ষন করা অনেকটাই কঠিন। আর শেয়াল, বেজি, ইদুরসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রাণীদের বসবাসের উত্তম স্থান হচ্ছে এই বাঁধ।
এই প্রাণীগুলো বাঁধে গর্ত করে বসবাস করে। আর বর্ষা মৌসুমে যখন নদীতে পানি বৃদ্ধি পায় সেই পানি বাঁধের এই সব গর্ত দিয়ে বছরের পর বছর চলাচল করে। এর এক পর্যায়ে গর্ত অনেক বড় হয়ে গেলে উপর থেকে মাটি ধ্বসে পড়ে। এবার বাঁধগুলোয় এমন ঘটনাই ঘটেছে। তাই বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো চিহ্নিত করে মেরামত করতে অনেক বড় বরাদ্দের প্রয়োজন হয় যা আমরা পাই না। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ ধ্বসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোথাও কোন সিপেজ/ ধ্বস দেখা গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্থ স্থানটি মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যার কারণেই নওগাঁয় এখন পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে কোন বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা যায় নাই। আমাদের একটি টিম সার্বক্ষনিক বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। এছাড়া কোথাও কোন সিপেজের খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হয়ে সেই স্থানটি মেরামত করা হচ্ছে। যদি আকাশের ভারী বৃষ্টিপাত না হয় এবং উজান থেকে আশঙ্কাজনক হারে পানির ঢল নেমে না আসে তাহলে নওগাঁয় এবার আর কোন বন্যার ভয় নেই।
এ বিষয়ে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সাংসদ অ্যাড. ওমর ফারুক সুমন বলেন, আত্রাই উপজেলা বিলবেষ্টিত উপজেলা। তাই ছোট যমুনা কিংবা আত্রাই নদীর বাঁধের কোথাও কোন বড় ধরণের ভাঙ্গন হলেই আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলা বন্যার কবলে পড়বে। তাই এবার বন্যা মোকাবেলায় সবধরণের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অগ্রিম কাজ করার জন্য নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় পাউবোর পাশাপাশি ত্রাণসহ সকল প্রকার প্রস্তুতি রেখেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তাদের সাথে রয়েছে। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাৎক্ষণিক গৃহিত কার্যক্রমকে ধন্যবাদ জানাই।