বিডি ঢাকা ডেস্ক
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কৃষি জমিতে অবাধে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে গত এক দশকে প্রায় ১৪ হাজার ৯৪৫ বিঘা কৃষি জমি কমে গেছে। যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে বিভিন্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিস্তীর্ণ মাঠের আবাদযোগ্য অনেক জমি জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে আছে। ফলে উপজেলায় আশঙ্কাজনকহারে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। উপজেলাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের ভায়াট গ্রামে প্রায় ৫০ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। মাধাইনগর ইউনিয়নের পৌষার-মাধাইনগর সড়কের পাশে ২০ বিঘায় পুকুর খনন চলছে। সোনাপাতিল সড়কের পাশে পুকুর খনন করা হচ্ছে। তাড়াশ পৌর শহরের শ্মশান ঘাট এলাকায়ও একাধিক পুকুর খনন চলছে। মাধাইনগর ইউনিয়নের সরাপপুর গ্রাম, ঝুরঝুরি গ্রাম ও তাড়াশ সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠের কৃষি জমিতে পানি আটকে আছে যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে। ঘাসে ভরে গেছে জমিগুলো।
ভায়াট গ্রামের আকছেদ আলী নামে একজন কৃষক বলেন, ‘ভায়াট গ্রামের পঞ্চাশ বিঘা আয়তনের পুকুরটি খনন করা হলে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। তাছাড়া গোচারণ ভূমি কমে যাচ্ছে। গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।’
জলাবদ্ধতার ভুক্তভোগী ঝুরঝুরি গ্রামের কৃষক হানিফ, জেলহক আলী ও লিটন সরকারসহ কয়েকজন বলেন, প্রভাব খাটিয়ে লোকজন অবৈধভাবে (জমির শ্রেণি পরিবর্তন) পুকুর খনন করেছেন। তারা মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু হাজারো জমি মালিক ও কৃষকের ক্ষতি হয়ে গেছে। সরাপপুর গ্রাম, ঝুরঝুরি গ্রাম ও তাড়াশ সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠের জমি কয়েক বছর ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। কোনো আবাদ হয় না। গরীব কৃষকদের জীবনমান আরো প্রান্তিক পর্যায়ে যাচ্ছে। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উপজেলার কৃষি মাঠে পুকুর বাড়ছে। এতে এক দশকে কৃষি জমি কমেছে ১৪ হাজার ৯৪০ বিঘা। এখনো প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধ। ধান উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।’
তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, ‘পুকুর খনন বন্ধে ইউএনও, এসিল্যান্ডের (সহকারী কমিশনার) কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’ তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক খালিদ হাসান বলেন, ‘পুকুর খনন চক্র সাধারণত রাতে খনন কাজ করে থাকেন। পুকুর খনন আমলি অপরাধের মধ্যে পড়ে। থানা পুলিশ এসব বন্ধ করতে পারেন। প্রয়োজনে আপনি যৌথ বাহিনীর সহায়তা নিন।’ জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুইচিং মং মারমা বলেন, ‘কোন এলাকাতে পুকুর খনন করা হচ্ছে তথ্য দিন। ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’