রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

পারস্য উপসাগরে ড্রোনবাহী শিয়া রণতরীর দাপাদাপি! লক্ষ্য ইহুদিরা নাকি যুক্তরাষ্ট্র?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১০ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

পারস্য উপসাগরে ফের যুদ্ধের দামামা! সেখানকার সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ড্রোন হামলায় সক্ষম পেল্লায় শিয়া রণতরী। ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে বন্দর ছেড়েছে ওই যুদ্ধপোত? না কি রয়েছে অন্য কোনও মতলব? রণসাজে সজ্জিত যুদ্ধজাহাজটির হাড়হিম করা ছবি প্রকাশ্যে আসতেই রক্তাক্ত পশ্চিম এশিয়ায় নতুন করে ছড়িয়েছে আতঙ্ক।

ড্রোন হামলায় সক্ষম পেল্লায় ওই যুদ্ধজাহাজটির পোশাকি নাম ‘শাহিদ বাঘেরি’। যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্রে সাজিয়ে জলযানটিকে পারস্য উপসাগরে নামিয়েছে ইরানি নৌসেনা। বর্তমানে সেখানকার নৌবন্দর ‘বন্দর আব্বাস’-এর তীরে এটি নোঙর ফেলেছে বলে জানা গিয়েছে। পারস্যের খাঁড়ি বেয়ে ড্রোনবাহী রণতরীটির সাহায্যে বড় কোনও হামলার ছক কষছে শিয়া ফৌজ? ইতিমধ্যেই উঠেছে সেই প্রশ্ন।

আমেরিকার সংবাদ সংস্থা ‘দ্য হিল’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নোঙর করা অবস্থায় ‘শাহিদ বাঘেরি’র ছবি তোলে কৃত্রিম উপগ্রহ। পরে সেগুলিকে পর্যালোচনা করে ‘ম্যাক্সার টেকনোলজ়িস’ নামের একটি সংস্থা। তাঁদের দেওয়া রিপোর্টে নজর পড়তেই চোখ কপালে উঠেছে আমেরিকার পদস্থ সেনাকর্তাদের।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির আকাশে একাধিক মানববিহীন উড়ুক্কু যানের উপস্থিতি নজরে আসে। এর মধ্যে আবার কতগুলি ড্রোনকে আমেরিকার সেনাছাউনির আশপাশে ঘোরাফেরা করতেও দেখা গিয়েছিল। এর পরই দ্রুত সেগুলিকে গুলি করে নামানোর পরামর্শ দেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সেই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই ইরানি ড্রোনবাহী রণতরীকে পারস্য উপসাগরে দেখতে পাওয়ায় ওয়াশিংটনের চিন্তা বেড়েছে। তবে কি শিয়া ফৌজি ড্রোনই চক্কর কেটেছে নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির আকাশে? সবার অলক্ষে আমেরিকার সেনাছাউনির যাবতীয় খবর সংগ্রহ করতেই সেগুলিকে ব্যবহার করেছে তেহরান? যদিও এই প্রশ্নগুলির উত্তর এখনও মেলেনি।

ড্রোনবাহী এই যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়েছে ইরান। একটা সময়ে এটি ছিল একটি মালবাহী জাহাজ। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেটাকেই ‘শাহিদ বাঘেরি’তে বদলে দেন শিয়া ইঞ্জিনিয়ারেরা। বিমানবাহী রণতরীর আদলে তৈরি করে জাহাজটিকে ইরানি নৌসেনার হাতে তুলে দেন তাঁরা।

‘ম্যাক্সার টেকনোলজ়িস’-এর দাবি, চলতি বছরের নভেম্বরে ‘শাহিদ বাঘেরি’ প্রথম বার সমুদ্রে নামে। ওই সময়ে যুদ্ধজাহাজটির ডেকে ছিল একটি মানববিহীন উড়ুক্কু যান। সেটিকে আবার জাল দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন ইরানি নৌসৈনিকেরা।

উপগ্রহচিত্রে ‘শাহিদ বাঘেরি’র ডেকে স্কি-জাম্প র‌্যাম্প এবং কৌনিক ফ্লাইট ডেক দেখা গিয়েছে। ড্রোনকে ওড়াতে এবং সেগুলিকে ফিরিয়ে আনতে নকশা বদলের সময়ে সেগুলি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুদ্ধজাহাজটি মোট কতগুলি ড্রোন বহন করতে সক্ষম, তা জানা যায়নি।

উপগ্রহচিত্রে ড্রোনবাহী রণতরীটির সঙ্গে আরও দু’টি যুদ্ধজাহাজকে দেখা গিয়েছে। সেগুলি হল, ‘শাহিদ মাহদাভি’ এবং ‘শাহিদ রৌদাকি’। একই ভাবে মালবাহী জাহাজের খোলনলচে বদলে সেগুলিকে তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘ম্যাক্সার টেক’।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘শাহিদ বাঘেরি’ ইরানি নৌসেনার শক্তিবৃদ্ধির জ্বলন্ত প্রমাণ। একে ‘ফরওয়ার্ড বেস শিপ’ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা। যে মালবাহী জাহাজটিকে ড্রোন হামলায় সক্ষম রণতরীতে বদলে দেওয়া হয়েছে, তার নাম ছিল ‘পেরারিন’। অসামরিক জলযান হিসাবে ২৪ বছর সমুদ্রে চষে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, পারস্য উপসাগরের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে রাখছে চাইছে ইরানি সেনাবাহিনী বা ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোর’ (আইআরজিসি)। আর তাই ‘শাহিদ বাঘেরি’কে বিমানবাহী রণতরীর মতো ব্যবহার করতে চাইছেন তাঁরা। যদিও ওই ধরনের প্রথাগত যুদ্ধজাহাজগুলির সঙ্গে এর বিস্তর ফারাক রয়েছে।

কিন্তু, তার পরও অনেকেই ‘শাহিদ বাঘেরি’কে ইরানের প্রথম বিমানবাহী রণতরী বলে উল্লেখ করেছেন। মালবাহী জাহাজটির আমূল বদল হয়েছে ‘বন্দর আব্বাসে’। এতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় স্থানীয় সংস্থা ‘ইরান শিপবিল্ডিং অ্যান্ড অফসোর ইন্ডাস্ট্রিজ় কমপ্লেক্স কোম্পানি’।

২০২২ সালের মে মাসে মালবাহী জাহাজটিকে বন্দরের শুকনো এলাকায় নিয়ে আসা হয়। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, তখন থেকেই এর খোলনোলচে বদলাতে কোমর বেঁধে লেগে পড়েন শিয়া প্রকৌশলীরা। মালবাহী জাহাজটির রণতরী হয়ে উঠতে দু’বছর সময় লেগেছে।

শিয়া মুলুকটির উপর রয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক নিষাধাজ্ঞা। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাতিয়ার সংগ্রহ করা তেহরানের পক্ষে সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে মালবাহী জাহাজকে রণতরীতে বদলে নৌশক্তি বৃদ্ধিতে মন দিয়েছে আইআরজিসি। সামরিক দিক থেকে একে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকেরা।

তবে ‘শাহিদ বাঘেরি’তে মোতায়েন থাকা ড্রোন লম্বা দূরত্বে হামলা চালাতে সক্ষম নয় বলেই ‘ম্যাক্সার টেক’-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, নিউ জার্সি এবং নিউ ইয়র্কের আকাশে ঘুরে বেড়ানো মানববিহীন উড়ুক্কু যানগুলি শিয়া ফৌজ পাঠিয়েছে, এই ধারণা কষ্টকল্পিত।

অন্য দিকে ইরানি ড্রোনবাহী রণতরী পারস্য উপসাগরে নামায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে ইজ়রায়েল। এই যুদ্ধজাহাজ যে তাঁদের নিশ্চিহ্ন করতে ব্যবহার হবে, তা বিলক্ষণ জানে ইহুদি সরকার। তাই গোটা ঘটনার উপর নজর রাখছে তেল আভিভ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com