বিডি ঢাকা ডেস্ক
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে পুলিশের সোর্সদের সাথে মাদক কারবারীদের সখ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠছে মাদক কারবারীরা। তাদের ছত্র ছায়ায় মাদক কারবারীরা মাদক পাচারের নিরাপদ পথ বেচেঁ নিয়েছেন স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা। নাঙ্গলকোট মাদক কারবারের ট্রানজিট পয়েন্ট চৌদ্দগ্রাম বাঙ্গড্ডা রোড। প্রতিদিন চৌদ্দগ্রাম হয়ে নাঙ্গলকোটের ১৩ পয়েন্টে মাদক প্রবেশ করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চৌদ্দগ্রাম থেকে বাঙ্গড্ডা বাজার ,তালতলা রোড হয়ে মাহিনী বাজার , চৌদ্দগ্রাম হয়ে নারানদিয়া ব্রীজ দিয়ে নাঙ্গলকোটে প্রবেশ করে মাদকের বড় বড় চালান।
অপরদিকে এ সড়ক গুলোর পার্শ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম থানার সাথে থাকায় চিল পাড়া ব্রীজ হয়ে ঢালুয় বাজার হয়ে মাদকের বড় চালার পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলা এ চালান গুলো প্রবেশ করে। দুই সড়কের ১৩টি রুটে প্রতিদিন নাঙ্গলকোটের উপর দিয়ে নোয়াখালী জেলাতে মাদকের বিপুল পরিমাণ চালান প্রবেশ করছে। এসব চালানের মধ্যে রয়েছে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল। তবে ফেনসিডিলের চেয়ে এখন সবচেয়ে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মরণনেশা ইয়াবা। এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে ইয়াবার কারবার না হচ্ছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে পুলিশের সোর্সরাই বিভিন্ন কৌশলে পুলিশের অজান্তেই তাদের নাম ভাঙিয়ে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এসব সোর্সদের মধ্যে আবার অনেকে নিজেরাই জড়িত মাদক ব্যবসায়। ফলে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সৃষ্টি হয়েছে মাদকের ভয়াবহ পরিস্থিতি।
জানা গেছে, সোর্সরা আসামি ধরার নামে পুলিশের সঙ্গে গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। যে কারণে সোর্সরূপী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বেড়ে গেছে মাদকের ছড়াছড়ি, অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অপরাধী গ্রেফতারে নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করাই সোর্সের কাজ। পুলিশ এসব সোর্স নিয়োগ করে অপরাধীদের মধ্য থেকেই। বিনিময়ে তারা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পান। কিন্তু সোর্সরা অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করেছেন। এরা মাঝেমধ্যে বিরোধী গ্রুপের দুই চার জনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখেন। এদের ছত্রছায়ায় নাঙ্গলকোটে ৫০টি মাদকের স্পট তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের নীরবতার কারণেই দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে অপরাধীদের সংখ্যা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, নাঙ্গলকোট পৌরসভার মুচি গল্লী, ঢালুয়া বাজার মুচী গল্লি, দৌলখাড় ইউনিয়নের ডুবাইয়ের বাজার ,মৌকরা বাজার ,বাঙ্গড্ডা বাজার ও নাঙ্গলকোট বাজার থেকে বান্নাঘর পর্যন্ত রেললাইন উপর অসংখ্য স্পটে চলছে মাদক বেচাকেনা। মাদক কারবারে কেউ বাধা দিলে তাকে নিয়ে চলে ষড়যন্ত্র। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালানোর আগেই সব মাদক কারবারীদের পূর্বেই সতর্ক করে দেন সোর্সরা। ফলে অভিযান চালিয়ে ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সফলতা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের একটি সূত্রে জানায়, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে সাধারণত পুলিশের সোর্স প্রয়োজন হয়। এ জন্য পুলিশের নিয়মিত বাজেটের একটি বড় অংশ সোর্সমানি হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। তবে এ সোর্সমানির টাকা কখনো সোর্সদের দেওয়া হয় না। তারা এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করেই তাদের পাওনা পুষিয়ে নেন। আর এ কারণে সোর্সরা কখনো ঐ টাকা দাবিও করেন না।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সোর্সমানি না দিলেও জব্দকৃত মাদকের একটি অংশ সোর্সদের দেওয়া হয়ে থাকে। পরে সোর্সরা তাদের লোক দিয়ে এসব মাদক বিক্রি করে থাকেন। অধিকাংশ সোর্সই মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় একাধিকবার পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক হন। এরপর থেকেই পুলিশের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে হয়ে ওঠে আরো ঘনিষ্ঠ। আইনের ফাঁকে বেরিয়ে এসেই শুরু করে তাদের পুরোনো কর্মকাণ্ড, সঙ্গে যোগ করেন পুলিশের সোর্স হিসেবে বাড়তি ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতাবলে নিরীহদের মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে, জমি বিক্রেতার টাকা খোয়ানোর কৌশলে ও স্থানীয় মাদকসেবীকে ও মাদক বিক্রেতা সাজিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াসহ নানা অপকর্ম চালায়। তাদের রয়েছে একাধিক জুয়ার আসর ও। অন্যদিকে প্রকৃত মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা ও সাপ্তাহিক আদায় করে নিজের ভাগেরটা রেখে অসাধু পুলিশ সদস্যদের তা দিয়ে থাকেন। এভাবেই নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয় মাদক কারবারি।
এই বিষয়ে নাঙ্গলকোট থানার ওসি একে ফজলুল হক বলেন, মাদকের বিষয়ে কোন ছাড় নেই , আমাদের আইন শৃংখলাবাহিনী সক্রিয় রয়েছে । রাতে প্রতিটি মাদক স্পটে আমাদের পুলিশ কাজ করে যাচেছ। তবে সোর্সদের বিরুদ্ধে যদি কোন অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।