বিডি ঢাকা ডেস্ক
দেশের ভূমি লেনদেন প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার দলিল লেখকদের ন্যায্য অধিকার ও পেশাগত স্বীকৃতি নিশ্চিত করার দাবিতে রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর সীমান্ত নোঙরে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার পাঁচ শতাধিক দলিল লেখক অংশ নেন। এছাড়াও দেশের সকল বিভাগের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সমাবেশের মূল প্রতিপাদ্য ছিল সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন, যার মধ্যে রয়েছে- দলিল লেখকদের পেশাগত স্বীকৃতি প্রদান, নিবন্ধন অফিসে হয়রানি বন্ধ, সরকারি কল্যাণ তহবিল গঠন, আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা, ডিজিটাল সিস্টেম চালু, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি।
সমাবেশে সর্বসম্মতিক্রমে রাজশাহী বিভাগের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। সভাপতি পদে নির্বাচিত হন এসএম আয়নাল হক, সাধারণ সম্পাদক পদে মো. সানাউল ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষ পদে আনোয়ার হোসেন। নবনির্বাচিত নেতারা দাবি আদায় ও সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
রাজশাহী বিভাগীয় ও জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি এসএম আয়নাল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির মহাসচিব আলহাজ্ব এমএ রশিদ। তিনি বলেন, দলিল লেখকরা দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করছেন। অথচ তারা এখনো প্রয়োজনীয় আইনি স্বীকৃতি ও সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। সরকারের উচিত দ্রুত তাদের দাবি পূরণ করা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি এসএম আয়নাল হক বলেন, “আমাদের সাত দফা দাবি শুধু দলিল লেখকদের জন্য নয়, বরং দেশের সুশাসন ও জনস্বার্থের জন্যও জরুরি। আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব, তবে প্রয়োজনে আন্দোলনও করব।”অনুষ্ঠানের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. সানাউল ইসলাম এর সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কেএস হোসেন টমাস। তিনি দলিল লেখকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই পেশায় যেসব সমস্যা ও অনিয়ম রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হলে আমাদের শক্তিশালী সংগঠন দরকার। সবাইকে শৃঙ্খলা মেনে দাবির পক্ষে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির ঢাকা বিভাগের সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম সরকার, ফরিদপুর বিভাগের সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল হক মিয়া, রংপুর বিভাগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মল্লিক, বরিশাল বিভাগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম আখন্দ, ঢাকা বিভাগের দলিল লেখক আলহাজ্ব এমএ তাহের ও ফিরোজ আলম, চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি মামুনুর রশীদ, এসএম আকরাম আলী, খুলনা বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বরিশাল বিভাগের সভাপতি গোলাম উদ্দিন মোল্লা, প্রধান উপদেষ্টা জাকির হোসেন মিলু।
আরো বক্তব্য রাখেন নওগাঁ জেলার খন্দকার হাবিবুর রহমান, পাবনা জেলা সভাপতি মির্জা তরিকুল আলম, নাটোর জেলার বনপাড়া উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং পবা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির দফতর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। উপস্থিত দলিল লেখক নেতারা জানান, দলিল লেখকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনে মাঠে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাদের মতে, এই আন্দোলন সফল হলে শুধু দলিল লেখকরাই নয়, দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায়ও স্বচ্ছতা ও গতি আসবে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে দলিল লেখকরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নিবন্ধন অফিসে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অভাব এবং কল্যাণমূলক সুবিধার ঘাটতি তাদের পেশাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তারা জানান, সরকারি তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হলে এই খাত আরও কার্যকর হবে।
সমাবেশ শেষে নবনির্বাচিত নেতাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। অনেকের হাতে ছিল দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার। দীর্ঘদিন পর সহকর্মীদের মিলনমেলায় স্থানটি ছিল উচ্ছ্বাস ও আবেগে ভরপুর। অংশগ্রহণকারীরা কুশল বিনিময় ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।