আলিফ হোসেন,তানোরঃ রাজশাহীর তানোরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে শীর্ষ দুই পদেই আসছে ‘চমক’ নতুন নেতৃত্ব। এদিকে নেতৃত্ব হারানোর আশঙ্কায় সভাপতি ও সম্পাদক কাউন্সিল স্থগিত করতে বিভিন্ন মহলে নানা দেনদরবার করেও ব্যর্থ হয়ে হতাশায় মুষড়ে পড়েছে। ফলে দীর্ঘ আট বছর পর বহুল আকাঙ্ক্ষিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল আগামী ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র জানায়, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি। এদিন টানটান উত্তেজনার কারণে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেই চলে যান কেন্দ্রীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম। তবে এবার উত্তেজনার সেই পারদ উঠেছে আরও ওপরে। তাই কাউন্সিলকে ঘিরে এরই মধ্যে অনেক জল্পনা-কল্পনার ডালপালা মেললেও শেষ পর্যন্ত কী হতে যাচ্ছে অনেকে সেটা নিয়ে শঙ্কিত। এবারো কি শুধু সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে নাকি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিলররা তাদের নেতা নির্বাচিত করতে পারবেন তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন। তবে তৃণমুলের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি তুলেছে তৃণমুল।এছাড়া নতুন নেতৃত্বের যে ধারা সূচিত হচ্ছে তার হাওয়া তানোরের উত্তপ্ত রাজনীতিকে শীতল করবে কি-না তা নিয়েও রয়েছে বিস্তর আলোচনা। তৃণমূলের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশার ব্যাপ্তি আরও বিস্তৃত হয়ে তা এখন সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি পদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার কোনো বিকল্প নাই।এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার, পাাঁচন্দর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ও বাঁধাইড় ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আলোচনায় রয়েছে। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রদিপ সরকারকেই যোগ্য নেতা বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন কর্মী ও সমর্থকরা। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাউন্সিলে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে কমিটি গঠনই একমাত্র সমাধান।কাউন্সিলরদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি খাদেমুননবী বাবু চৌধুরী। সূত্র জানান, গত কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার প্রায় এক বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়। সেই কমিটি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কাদা ছোড়াছুড়ি চলতে থাকে। এদিকে জাতীয় সংসদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে ছিটকে পড়ে সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বলে জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রাম কমল সাহা। সম্প্রতি তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে সভাপতি পদে মেয়র গোলাম রাব্বানী ও চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নাকে নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকরা ফেসবুকে ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন যেখানে ময়না অনেক এগিয়ে রয়েছে। একই সঙ্গে প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকারকেও সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দাবি তুলে প্রচারণায় রয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মামুন প্রার্থী হবার প্রত্যাশা করলেও তাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে তেমন কোনো সাড়া ও আলোচনা নেই। এই সুযোগে কাউন্সিলরদের সমর্থন পেতে নিজের নানা ত্যাগ-তিতীক্ষার কথা তুলে ধরে আলোচনায় এসেছেন তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার। এসবের পাশাপাশি আগামী কাউন্সিলে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন দলের হাইকমান্ডের সঙ্গেও। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, একজন সঠিক নেতার জন্ম হয় রাজপথ থেকেই।রাজনীতি করতে রাজত্ব লাগে না। লাগে নীতি, নৈতিকতা ও সৎসাহস আর আদর্শ। মুজিব আদর্শ বুকে ধারণ করে নেতাকর্মীর সুখে-দুঃখে পাশে থেকে রাজপথে সংগ্রাম করে এতদূর এসেছি। আগামীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থেকে তানোর আওয়ামী লীগকে আরও জনবান্ধব ও শক্তিশালী করতে চাই। তবে, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দেবেন তাকে নিয়েই আমরা দলকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করব বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে গোলাম রাব্বানী ও আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, কেন্দ্র কমিটি থেকে তারা বহিষ্কৃত নন। কোনো কারণে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বহিষ্কার করে পত্র দেন। তবে, এখনও তাদের প্রতি তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আস্থা রয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচন দেয়া হলেও তারাই আবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন বলে জানান তিনি।