ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক বাংলাদেশ পোশাক রপ্তনিকারক ও মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২১-২৩ মেয়াদের পরিচালক পদে জয় লাভ করেছেন। এই নির্বাচনে তার মা রুবানা হক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে সংগঠনের পরবর্তী পর্ষদে পরিচালক পদে একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন মা-ছেলে।
বিজিএমইএর ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটছে। দেশের ব্যবসায়িক সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদেও এমন ঘটনা বিরল।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখে গেছে, পরিচালক পদে বিজিএমইএ’র বর্তমান সভাপতি রুবানা হক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৫৭টি ভোট পেয়ে এবং তার ছেলে নাভিদুল হক ৯৫০ ভোট পেয়ে ১৭তম অবস্থানে পরিচালক হিসেবে জয় লাভ করেছেন। তারা উভয়ে ঢাকা অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
রোববার (৪ এপ্রিল) ঢাকা-চট্টগ্রামে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। এবারের নির্বাচনে করোনাভাইরাসের কারণে ভোট গ্রহণের সময় তিন ঘণ্টা বৃদ্ধি করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
নির্বাচনে মা-ছেলে প্যানেল ‘ফোরাম’ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এক সময় এই প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেয়র আনিসুল হক। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ফোরামের নেতৃত্বে আসেন রুবানা হক। এই প্যানেল থেকে তিনি বিজিএমই’র সভাপতি হিসেবে জয় লাভ করেন। তিনিই এই সংগঠনের প্রথম নারী সভাপতি।
আনিসুল হক ২০০৫ -২০০৬ সালে বিজিএমই’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
প্রথমবারের মতো বিজিএমইএর পর্ষদে মা-ছেলে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রুবানা হক বলেন, মানুষ হিসেবে আমাদের সন্তান আমাদের চাইতে অনেক ভালো। মা হিসেবে আমি আশা করি, আমার ছেলে তাঁর শিক্ষা, নিষ্ঠা আর সততা দিয়ে বিজিএমইএর পর্ষদে কাজ করবে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর নবনির্বাচিত পরিচালক নাভিদুল হক বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাবা-মার কারণেই আমি আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি। এটিও সত্য যে আমি কিছু কাজ করেছি। আমাকে আমার কাছে আমার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়েছে। সংগঠনের পরিচালক পদে গেলে পোশাকশিল্পের জন্য কিছু করতে পারব, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই কিন্তু মা আমার নাম প্রস্তাব করেছেন।
পর্ষদে মায়ের সঙ্গে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রেই আমার বাবা-মার কাজ দিয়েই আমাকে সবাই বিচার করে। এটি আমার প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ। কোনো দিনই আমি তাদের কাছাকাছি যেতে পারব না। তবে তাঁদের সুনাম নষ্ট হবে এমন কোনো কাজ আমি কখনোই করব না।
বিজিএমইএ’র এবারের নির্বাচনে মোট ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে ‘সম্মিলিত পরিষদ’ এবং ‘ফোরাম’র ৩৫ জন করে মোট ৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে ২৪টিতে সম্মিলিতি পরিষদ এবং ১১টিতে ফোরাম বিজয়ী হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলের মোট ২৬টি পরিচালক পদে ১৭টিতে সম্মিলিত পরিষদ এবং ফোরাম ৯টিতে জয় লাভ করেছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯ জন পরিচালকের মধ্যে ৭টিতে সম্মিলিত পরিষদ এবং ২টিতে ফোরাম প্রার্থী জয়লাভ করেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলের মধ্যে সর্বাধিক ১ হাজার ২০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার ফারুক হাসান। কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল ফোরাম লিডার এবিএম সামছুদ্দিন ৯০৪ ভোট পেয়ে হেরে গেছেন।
ফারুক হাসানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর পর্ষদ গঠিত হবে। ফারুক হাসান হবেন সংগঠনটির পরবর্তী সভাপতি। তার আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি রয়েছে। বিজয়ী পরিচালকেরা আগামী ১৬ এপ্রিল সভাপতি ও সাতজন সহসভাপতি নির্বাচিত করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০ এপ্রিল আগামী দুই বছরের নতুন কমিটি বিজিএমইএর দায়িত্ব নেবে।