নিজস্ব সংবাদদাতা :করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে সবাইকে সাবধানে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছেন। তার অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি যথেষ্ট ভালো আছেন। তিনি শুধু নিজের নয়, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিগত স্টাফদেরও খোঁজখবর রাখছেন।
সোমবার (১২ এপ্রিল) গুলশানের ‘ফিরোজায়’ বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে আসার পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান মেডিসিন ও বক্ষ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ এফ এম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত বলব যে, ওনার (খালেদা জিয়া) অবস্থা খুবই স্থিতিশীল। আজকে পর্যন্ত উনি যথেষ্ট ভালো আছেন। উনি স্পিরিটেড আছেন। আমরা আশা করছি যে, যদি এভাবে আরও এক সপ্তাহ পার হওয়া যায় তাহলে ইনশা আল্লাহ আমরা বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে যাব।
এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকী বলেন, আমাদের সাথে বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন। সবচেয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যে, যুক্তরাজ্যে যে ওনার ছেলে ও ছেলের ওয়াইফ আছেন ডা. জোবাইদা রহমান, সে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমার স্টুডেন্ট ছিল, উনিও সব সময় মোটিভেট করছেন। আমরা একটা টিম ওয়ার্ক হিসেবে আলোচনা করে ওনার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা করছি। কোথাও কোনো গ্যাপ বা কোথাও কোনো রকমের সন্দেহের কিছু অবকাশ নেই।
খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত ওনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো আছে বলে মনে হচ্ছে।
খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, কোভিডে আনসারটেনিটি আছে। পৃথিবীর কেউ বলতে পারবে না যে, করোনা প্রথম সপ্তাহে কেমন থাকবে, দ্বিতীয় সপ্তাহে কি হবে। কারও পক্ষে বলা সম্ভব না। তারপরও আমাদের প্রস্তুতি আছে। আমরা যদি কখনো মনে করি, বিন্দুমাত্র আমাদের মনে হয় যে, তাকে হাসপাতালে নেয়া দরকার। আমরা সেই মুহূর্তে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব- সে ধরনের প্রস্তুতি আমরা রেখেছি।
এ সময় মেডিকেল বোর্ডের সদস্য বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মো. আল মামুন উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা শাইরুল কবির খান।
বিকেল ৫টায় মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা খালেদা জিয়ার বাসায় প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন সন্ধ্যা ৬টার পর। অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, আমরা তিন চারজন ছিলাম, উনি আমাদের সামনে এসে বসেছেন। আমি ওনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দীর্ঘ বছর ধরে। এর আগেও ওনাকে আমি যেভাবে এসে দেখেছি, সেভাবেই দেখেছি। উনি রেডি হয়ে আসেন, বসেন। আমরা সেভাবে যাই। আমাদের সামনে সামনাসামনি কথা বলেন।
অন্যরা কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই কোভিড পজিটিভ। প্রত্যেককে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিকে দু-একজনের জ্বর ছিল। ওদের এখন জ্বর নাই, সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চেয়ারপারসন শুধু নিজেই নন, অন্য যারা আছেন তারা নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন কিনা তা তদারকি করছেন।
এফএম সিদ্দিকী বলেন, সবাইকে দোয়া করার জন্য অনুরোধ করার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন সবাইকে সাবধানে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে বলেছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের সঙ্গে অনলাইনেও আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ নেন। এ ছাড়া লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও ইন্টারনেটে যুক্ত থেকে অংশ নেন।
ফিরোজায় খালেদা জিয়া ছাড়াও ৮ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনকে নিজেদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্যদের চিকিৎসা ফিরোজাতেই হচ্ছে।
এর আগে গত শনিবার খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়। রবিবার তার রিপোর্ট পজিটিভ হয়। এরপর মেডিসিনের বিশেষ চিকিৎসক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা চিকিৎসা শুরু করেন।
এখন পর্যন্ত কোনো উপসর্গ নেই
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘চেয়ারপারসন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। এখন পর্যন্ত তার শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়নি। স্বাভাবিকভাবেই তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। শুধু তিনি নন, করোনায় আক্রান্ত তার অন্য স্টাফদের অবস্থাও ভালো। ২৪ ঘণ্টাই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ রাখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিনি সুস্থ আছেন। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।’
৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ সীমিত।
বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের দোয়া ও প্রার্থনা
এদিকে খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ শুনে নেতা-কর্মীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীরা নেত্রীর রোগমুক্তির জন্য দোয়া করছেন। তার আশু রোগমুক্তি কামনা রাজধানীসহ সারাদেশের মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল হয়েছে বলে দলের কেন্দ্রীয় দফতর শাখা জানিয়েছে। ঢাকায় পল্টন জামে মসজিদে বাদ জোহর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, নাজিম উদ্দিন আলম, রফিক শিকদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের আহবায়ক শাহ নেছারুল হক।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই দোয়া মাহফিলে ছিলেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, ওলামা দলের মাওলানা আবদুল খালেক, মাওলানা মো. ইব্রাহিম, মাওলানা সোবহানসহ চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিকালে খালেদার রোগমুক্তির কামনায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভা হয়। আজ মঙ্গলবার কমলাপুরের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা সভা করবেন দলের নেতাকর্মীরা।