ইয়াহিয়া মির্জা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছেন। এমন একটি ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি দেখে আমারও ভালো লেগেছে। এখন আসলে মাছ ধরার সিজনই। শহরের শৌখিন মাছশিকারীরা বড়শি নিয়ে বিভিন্ন স্পটে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। ধানমন্ডি লেকে কিছু মানুষকে দেখি বড়শি পানিতে ফেলে বসে থাকতে। মাছ ধরা পড়ে কিনা আমি কখনো দেখিনি। এদের দেখলে বুঝা যায়, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা ধৈর্য্যের ব্যাপার।
ঢাকা শহরে বড় হয়েছি। তাই মাছ ধরার স্মৃতি আমার খুব বেশি নেই। এ নিয়ে শৌখিনতাও নেই। তাই হুইল বড়শি নিয়ে লেকে যাওয়ার চর্চাও করা হয়নি। তবে ছোটবেলায় দিনাজপুর নানী বাড়ির কিছু স্মৃতি মনে পড়ে। তখন এই সিজনে খালেবিলে পলো নিয়েই মাছ ধরা হতো। আমরা ছোটরাও যেতাম। বড়রা মাছ ধরা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। আমরা ছোটরা গায়ে কাদাপানি মাখতেই বেশি ব্যস্ত থাকতাম। নানী বাড়িতে একাধিক পুকুর ছিলো। সেখানে মাছ ধরা হতো জাল দিয়ে। এসব স্মৃতি এখনো চোখের সামনে ভাসে।
গ্রামগঞ্জেও কিন্তু এখন দলবেঁধে মাছ ধরা চলে। এই সময়ে খাল-বিল থেকে বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। জাল নিয়ে পানিতে নামছেন অনেকেই। অনেক এলাকায় আবার মাছ ধরা হয় পলো দিয়ে। এটি মূলত খাঁচার মতো। পলো দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য কিন্তু আসলেই চমৎকার।
মাছ ধরা যে পড়ছে – এর প্রভাব কিন্তু আছে মাছের বাজারেও। দাম তুলনামূলক কম। আবার নানারকম দেশি মাছও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এই সিজনে বিভিন্ন এলাকায় মাছের মেলাও হচ্ছে। এই মেলাগুলো কিন্তু শতবর্ষী ঐতিহ্য হিসেবে এখনো টিকে আছে। এটা অনেকটা উৎসবেও পরিণত হয়। কারণ আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসে।
আমরা মাছেভাতে বাঙালি – এই সিজনে কথাটি বাস্তবেই মিলে যায়। তবে একটা বিষয় নিয়ে আমি হতাশ। শহরের তরুণ প্রজন্ম মাছের চেয়ে মাংস খেতে বেশি আগ্রহী। বিশেষ করে চিকেনের আইটেম পেলে তারা বেশি খুশি হয়। মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত তারা। এর জন্য দায়ী আসলে পরিবার। কারণ সেখান থেকেই শিশুরা সব শিখে, সবকিছু অভ্যাস করে। তাই মাছভাত খাওয়ানোর বিষয়টি পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।
এখানে আরো একটি বিষয় বলতে চাই। অনেকেই চাষের মাছ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। অথচ যদি চাষ না হতো তাহলে মাছের দাম অনেক বেশি হতো। তখন সবার পক্ষে মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব হতো না। তাই মাছ চাষ করা মন্দ কিছু নয়। আরো একটা পজিটিভ দিক হচ্ছে এখন দেশি প্রজাতির অনেক মাছও চাষ হচ্ছে। মৎস্য মারিবো খাইবো সুখে; বাঙালির এই ঐতিহ্য বেঁচে থাকুক- এই কামনা থাকলো।