যশোর সংবাদদাতা : চাঞ্চল্যকর ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওতে টিকটক হৃদয় বাবুর সহযোগী যশোরের এক যুবকের নাম এসেছে। ভিডিও প্রচার হওয়ার পর আলামিনের (২৪) বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন রবিবার রাতে বলেন, ভারতের তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় জড়িত কারও বাড়ি যশোরে এমন তথ্য তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে বলে তিনি জানান।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, সম্ভবত গত ২১ মে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। নির্যাতনে জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে আটকের খবরও জানায় সেখানকার গণমাধ্যম। গ্রেফতার সবাই একই গ্রুপের এবং সবাই বাংলাদেশি বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনাটি প্রচারের পর নির্যাতনের শিকার তরুণীর পিতা ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছেন। তরুণীটিকে পাচার করে নিয়ে যাওয়ার মূল হোতা টিকটক হৃদয় বাবুর পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভিডিওটি প্রচার হওয়ার পর নির্যাতনকারী চক্রের মধ্যে যশোরের আলামিন নামের এক যুবকও রয়েছে। যশোরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকার ভ্যানচালক মনুমিয়ার ছেলে আলামিন। এ ব্যাপারে মনু মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আলামিন ভালো না। বাইরে থেকে আলামিনের কাছে লোক আসতো। ঘরে বসে তারা কিসব (ইয়াবা) খেতো। তাই আট মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। শুনিছি, আলামিন ভারত গেছে, তার বউ বাপের বাড়ি। সেখানে সে কি করছে জানি না, তার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আগে থেকেই বেপরোয়া আলামিন দেশে দু’টি বিয়ে করেছে। দুই সংসারে তার দু’টি সন্তানও রয়েছে। তাদের ফেলে সে ভারতে চলে যায়। ভিডিওতে সে গোলাপি ফুলহাতা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরিহিত এবং তার পায়ে কালো রাবারের ব্যান্ড রয়েছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, ভিডিওতে থাকা লাল ফুলহাতা টপস পরা মেয়েটির নাম তানিয়া। এই তানিয়ার বাড়ি যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামে। তানিয়াকে আলামিন স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভারতে নিয়ে গেছে। আলামিন বা তানিয়ার কেউই এখনও আটক হয়নি। তারা ওই এলাকায় পালিয়ে রয়েছে।
এদিকে ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, টিকটক হৃদয় বাবু, আলামিনসহ এই চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরুর কোর্টলোর এলাকায় থাকে। সেখানে ‘রাফি’ নামে একজনের আস্তানা রয়েছে। এই রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। তার প্রকৃত নাম আশরাফুল মন্ডল। রাফিকে আলামিনরা বস বলে সম্বোধন করে।
জানা যায়, গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আলামিন তানিয়াকে নিয়ে অবৈধপথে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। যাওয়ার আগে সে চাঁচড়া এলাকার ইয়াবা বিক্রেতা কামরুলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে নিয়ে যায়। ‘অরিজিনাল মাল’ হিসেবে ইয়াবাআসক্ত ‘রাফিকে’ উপহার দেয়ার জন্য এই ইয়াবা সে বেঙ্গালুরু নিয়ে যায়।
ভারতের সূত্রটি আরও জানায়, নির্যাতনে জড়িত আলামিন ও তানিয়া গাঢাকা দিয়েছে। এছাড়া ডালিম ও সবুজ নামে আরও দুই যুবক ছিল, তারাও পালিয়ে গেছে। বেঙ্গালুরু পুলিশ তাদের খুঁজছে।
এদিকে, ভাইরাল ভিডিও নিয়ে কথা হয় চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তারা জানান, এলাকায় এটি জানাজানি হওয়ার পর অনেকে আলামিনের পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি জানিয়েছেন। এটি নিয়ে বাড়ির লোকজনও চাপের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় পুলিশও বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজখবর করছে। তারা ওই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।