শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন

রংপুরে দাবিকৃত যৌতুকের লোভে এতটা অমানবিক হতে পারে স্বামী!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২ জুন, ২০২১
  • ৯০৪ বার পঠিত
রংপুরে দাবিকৃত যৌতুকের লোভে এতটা অমানবিক হতে পারে স্বামী!
ফটো : সংগৃহীত

রংপুর সংবাদদাতা : রংপুরে দাবিকৃত যৌতুক না পাওয়ায় চলন্ত গাড়ি থেকে দুই সন্তানসহ স্ত্রীকে ফেলে দিয়েছেন পাষণ্ড স্বামী। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হাজিপাড়া এলাকায়। নির্যাতনকারী স্বামী সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নির্যাতিতা মায়িশা মোজাহিদ তন্নী বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। ওই নারী রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলুর ভাতিজি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে রংপুর নগরীর শালবন মহল্লার মোজাহেদ হোসেন ফুলুর মেয়ে মায়িশা মোজাহিদ তন্নীর সাথে কাউনিয়া থানার হারাগাছ হাজিপাড়া এলাকার মাহমুদার রহমানের ছেলে মতিউল হাসান সুমনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ছেলে ও তার স্বজনদের অনুরোধে মেয়ের সুখের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকার ১৭ ভরি সোনার গহনাসহ প্রায় ২৮ লাখ টাকার মালামাল ও অর্থ প্রদান করা হয়। বিয়ের কিছুদিন পর মায়িশা জানতে পারে তার স্বামী সুমন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় আগে একটি বিয়ে করেছিলেন, যৌতুক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। এত কিছু জানার পরেও মায়িশা স্বামীর সাথে ঘর সংসার করতে থাকেন। এ সময় তাদের দুটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তাদের বয়স যথাক্রমে চার বছর ও দেড় বছর।

এদিকে তার স্বামী সুমন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় তার প্রতিদিন ৫/৭ হাজার টাকা প্রয়োজন হতো। প্রথম দিকে তার বাবা মা এ মাদক কেনার টাকা টাকা প্রদান করলেও হঠাৎ করে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এর পরই শুরু হয় মায়িশার ওপর স্বামী সুমনের নির্যাতন। তিনি স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করেন। বিষয়টি মায়িশা তার বাবা-মাকে জানালে তার বাবা মেয়ের সুখের কথা ভেবে আবারো ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন। এ টাকা শেষ হয়ে গেলে আবারো ২৫ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে বাবার বাড়ি থেকে আনার জন্য এক মাস আগে মারধর করে বাসা থেকে দুই শিশু সন্তানসহ বের করে দেয়া হগয় মায়িশাকে। পরে বাবার বাড়িতে চলে আসেন তিনি। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবলু ও তার ছোট ভাইসহ স্বজনরা দুই শিশু সন্তানের কথা ভেবে সংসার করার জন্য সুমন ও তার বাবাসহ স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে গত ২৪ মে বাসায় ডেকে আনেন। সেখানে আলোচনা করার পর ওইদিন আবারো সুমনকে ১২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এর পর মায়িশা স্বামী সুমন ও তার দুই শিশু সন্তানসহ শ্বশুর মাহমুদার রহমানের প্রাইভেট কারে ওঠেন। কিছু দূর যাবার পর যৌতুকলোভী সুমন কেন তার দাবি করা ২৫ লাখ দেওয়া হলো না একথা বলে গাড়ির ভেতরেই আবারো মায়িশাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে গাড়ির ভেতরে ইলেকট্রিক তার গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন। এসময় তার আত্মচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে চলন্ত গাড়ি থেকে সুমন তার স্ত্রী মায়িশা ও দুই শিশু সন্তানকে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় মায়িশাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে সুস্থ হবার পর মায়িশা নিজেই বাদী হয়ে মেট্রোপলিটান কোতয়ালি থানায় গত ২৭ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নম্বর ৫৭। এ ঘটনায় পুলিশ পাষণ্ড স্বামী সুমনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দিলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

মায়িশার বাবা মোজাহিদ হোসেন ফুলূ জানান, মেয়ের সুখের জন্য এত টাকা দিয়েও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলাম না। মামলা করার পর সুমনের স্বজনরা মামলা তুলে নেবার জন্য নানানভাবে হুমকি প্রদান করছেন। ফলে মায়িশা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি ঘটনার দায়িদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, আমরা ভাজিজির সংসার সুখের জন্য কী না করেছি। কিন্তু সুমন যে মাদকসেবী আর যৌতুকলোভী তা জানতাম না। আমরা মামলা দায়ের করেছি, আশা করি ন্যায় বিচার পাবো।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালী থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান, এটা চরম অমানবিক ঘটনা। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com