তানোর(রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোর পৌরসভায় নির্বাচনের আগাম হাওয়া বইছে।এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে শীর্ষ নেতাদের দরজায় দরজায় ধর্ণা দেবার পাশাপাশি করছেন দৌঁড়-ঝাঁপ ও লবিং একই সঙ্গে শুরু করেছেন জোর তৎপরতা। এসবের সঙ্গে দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করে ভোটারদের দৃস্টি কাড়তে এলাকায় দৃস্টিনন্দন ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুন ইত্যাদি সেঁটে গণসংযোগও করেছেন। এতে তানোর পৌর এলাকায় নির্বাচনের আগাম হাওয়া বইতে শুরু করেছে।এলাকায় সম্ভব্য প্রার্থীদের এমন তৎপরতায় হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে ভোটারদের মধ্যে চলছে আলোচনা কে কোন দলের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন সেটা নিয়ে। তবে আবাসিক হোটেল ও হাট ব্যবসায়ী(ইজারদার) আবুল বাসার সুজনকে নিয়ে পৌর আওয়ামী লীগে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, আবাসিক হোটেল ও হাট ব্যবসায়ীরা কখানো ভাল জনপ্রতিনিধি হতে পারেন না। তারা বলেন, পশুহাটে তিনি রিতিমতো জোর-জুলুম করে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করছেন আবার সেই টাকায় পৌরসভায় লোক দেখানো দান-অনুদান দিয়ে দাতা ‘হাতেমতায়’ হতে চাচ্ছেন। তারা বলেন, তিনি যদি এলাকার উন্নয়ন ও মানব সেবা করতে চান সেটা ভাল তাহলে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেন, শুধু তানোর পৌরসভা কেনো পুরো উপজেলায় অনেক হতদরিদ্র মানুষ আছে তাদের সাহায্যে-সহযোগীতা করবেন, এছাড়াও পৌরসভা সৃস্টির পর থেকেই পৌরসভার হাট-বাজারের ইজারদারী করছেন, তবে কুড়ি বছর পর ভোটের আগে তার মানব সেবার কথা মনে পড়েছে। আর এতোদিন তিনি কোথায় ছিলেন ভোট মৌসুমে কেনো, আবার এসব মানবিক কাজ করতে মেয়রের চেয়ারের দিকে নজর কেনো ওই চেয়ার ব্যতিত কি সম্ভব নয়-? তাকে নিয়ে ইত্যাদি হাজারো প্রশ্ন পৌরবাসীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয় ও বহিরাগত ইস্যুতে বহিরাগত ঠেকাতে পৌরবাসী একট্ট্রা ঘোষণা করায় তিনি চরম বেকায়দায় পড়েছেন। পৌরবাসী এবারের নির্বাচনকে ইজ্জ্বতের লড়াই বলে অবিহিত করেছে। তারা বলছে, উড়ে এসে জুড়ে বসে হঠাৎ করেই কেউ রাজত্ব,রাজা ও রাজকন্যা হাতে পেলে পরবর্তীতে সকলেই একই পথ অনুসরণ করবে আর পৌরবাসী পলেটিক্যাল লেবার হয়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকবে সেটা হতে পারে না তাই এটা তাদের ইজ্জ্বতের লড়াই। এখন পৌরবাসীকেই সীদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি সেই লেবার হয়ে ভাড়ায় খাটবে না নিজেরা কখানো মসনদে আসিনের স্বপ্ন দেখবে।এছাড়াও রাজনীতি আর জনপ্রতিনিধি এক নয় একজন দক্ষ রাজনৈতিক নেতা হলেই সে জনপ্রতিনিধি হবেন তার কোনো গ্যারান্টি নাই। উদাহারণ হিসেবে বলা যায় তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদিপ সরকার।কারণ সমসাময়িক রাজনীতিতে প্রদিপ সরকারের মতো ঝানু ও দুরদর্শী সম্পন্ন নেতৃত্ব নাই সেটা সবাই অপকটে স্বীকার করেন। কিন্ত্ত রাজনীতিতে দক্ষ নেতৃত্ব হিসেবে তিনি যেমন সফল জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে আবার তেমনি ব্যর্থ। তার মানে এই নয় যে তিনি খারাপ হয়তো তার কপালে রাজটিকা নাই আসলে তারা রাজনীতিতে শতভাগ সফল তাই তাদের হাতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের চাবিকাঠির নিয়ন্ত্রণ রাখায় উত্তম। স্থানীয়রা বলছে, তানোর পৌর নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ বা যোগ্যতায় বিজয়ী হবেন এমন নেতৃত্ব নাই। স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদিপ সরকার এই তিন নেতৃত্বের সম্মেলিত প্রচেস্টা বিশেষ করে স্থানীয় সাংসদের প্রাণপন প্রচেস্টা ব্যতিত আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীর বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। যেখানে প্রার্খীর কোনো অবদান নাই সেখানে কেনো বহিরাগত প্রার্থী-? তাদেরকেই যদি বিজয়ী করতে হয় তাহলে তারা স্থানীয় নেতৃত্বকে বিজয়ী করুক সেটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। জানা গেছে, তানোর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপির দখলে রয়েছে, কারণ পৌরসভার সিংহভাগ ভোটার জামায়াত-বিএনপি মতাদর্শী। তবে এবার আওয়ামী লীগের দখলে নিতে স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা পশ্চিম আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং আবাসিক হোটেল ও হাট ব্যবসায়ী (ইজারাদার) আবুল বাশার সুজনকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আর বিতর্ক ও দলীয়কোন্দলের সুত্রপাত হয়েছে সেখান থেকেই।স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে চাপিয়ে দেয়া প্রার্থী বলে মনে করেছন। যে কারণে সুজন মাঠে নেমেই স্বজনহারা হয়েছেন। স্থনীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতাকর্মীরা অনেক আগেই তাকে ত্যাগ করেছে এখন তৃণমুলের নেতাকর্মীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এতে চরম সংকটে পড়েছেন সুজন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া তো পরের কথা শক্ত প্রতিদন্দিতা করায় তার কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় ও বহিরাগত ইস্যুতে সুজন চরম বেকায়দায় রয়েছে। এদিকে আবুল বাশার সুজন আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ঘোষনা দিয়ে এলাকায় গনসংযোগ, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান অনুদান দিয়ে ভোটারদের কাছে যাওয়ার ও মন জয় করার চেষ্টা করছেন। কিন্ত্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বহিরাগত ও চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্ব মানতে নারাজ তারা কোনো ভাবেই সুজনকে মেনে নিবেন না রাজনীতিতে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে প্রয়োজনে তারা সুজনের বিজয় ঠেকাতে স্বপক্ষ ত্যাগ করতেও পিছু পা হবেন না এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কোনো ভাবেই সুজনকে মেনে নিতে পারছেন না। তারা প্রকাশ্যে বিরধীতা না করলেও তার সঙ্গে থাকছেন না বরং প্রতিপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।তারা বলছেন টাকা থাকলেই যদি জনপ্রতিনিধি হওয়া যেতো তাহলে বিত্তশীলরা কমবেশী সকলেই জনপ্রতিনিধি হয়ে যেতেন। কিন্ত্ত সেটা নয় জনপ্রতিনিধি হতে গেলে একটি রাজনৈতিক দলের প্লাটফর্ম দরকার এবং প্রয়োজন সেই প্লাটফর্মে সকল নেতাকর্মীর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান যেটা সুজনের নাই তার দ্বারা সেটা করা সম্ভব নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর আওয়ামী লীগের এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, মানুষ রাজনীতি করে একটা স্বপ্ন নিয়ে, যদি এভাবে বহিরাগত নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে তাদের রাজনীতি করে কি হবে তারা কি সারাজীবন শুধু অপরের কামলা হয়েই থাকবেন কখানো কোনো চেয়ারে বসতে পারবেন না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কি দেউলিয়া হয়ে গেছে যে তারা স্থানীয় প্রার্থী দিতে পারছে না তাই বহিরাগত প্রার্থী দিতে হচ্ছে, তারা কোনো বহিরাগত নেতৃত্ব মানতে নারাজ নিজেদের অস্থিত্ব ধরে রাখতে বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন সেটা সম্ভব না হলে প্রয়োজনে তারা সুজনের বিজয় ঠেকাতে স্বপক্ষ ত্যাগ করতে পিছু পা হবেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, তানোর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত এমরান আলী মোল্লার ঘনিষ্ঠ সহচর ও বিএনপির রাজনীতিতে অর্থের যোগানদাতা ছিলেন হাট ব্যবসায়ী সুজন। সুজনের বিরুদ্ধেও টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির গুন্জন রয়েছে, এমন বির্তকিত ব্যক্তি কিভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন। তারা এবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃস্টি আকর্ষণ ও জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছন। জানা গেছে, তানোর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমরুল হক গত নির্বাচনে বির্তকিত ফলাফল ঘোষনায় মাত্র ১৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন, তবে পরাজিত হলেও তিনি মাঠে ভোটারদের সঙ্গেই রয়েছেন। তবে সুজনকে প্রার্থী করার ঘোষণায় তিনি বিরোধীতা করে তদ্বির-লবিং-গ্রুপিং ও শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। দলীয় মনোনয়ন তাকে দেয়া না হলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।তানোর পৌর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয়কোন্দল ও মতবিরোধ সৃস্টির মুল কারণ সুজন। এসব বিবেচনায় সুজনের বিষয়ে শতর্ক না হলে আগামীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অসনি সঙ্কেত অপেক্ষা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর আওয়ামী যুলীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, সুজনকে মনোনয়ন দেয়া হলে আমরাও দেখতে চাই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বা শক্তি বেশী না হঠাৎ ফুঁলেফেঁপে উঠা এসব হাইব্রিডদের জনপ্রিয়তা বেশী।তিনি বলেন,এসব কালো টাকার মালিকদের দুর্বৃত্তায়নের কারণে মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নস্ট চলেছে। এব্যাপারে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, তানোর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের অনেক যোগ্য নেতা থাকার পরেও এমপি কেনো বহিরাগত সুজনকে প্রার্থী করতে চাই সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।তিনি বলেন,তানোর পৌরসভার মানুষ বহিরাগত প্রার্থীকে কখানোই মেনে নিবেন না। এব্যাপারে আবুল বাসার সুজন বলেন, তার বিরুদ্ধে উঙ্খাপিত অভিযোগ সঠিক নয় ভিত্তিহীন।তিনি বলেন, এমপি মহোদয় তাকে মাঠে থাকতে বলেছেন মনোনয়ন দেয়া না দেয়া এটা দলের বিষয়, দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি প্রার্থী হবেন না দিলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।