নিজস্ব সংবাদদাতা : ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুতে ওই আসনের অন্তর্ভুক্ত মিরপুর, শাহআলী ও দারুস সালাম থানা, রূপনগর থানার আংশিক এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়নে শোকাবহ ব্যানারে ছড়াছড়ি। শোকের ব্যানার থানা থেকে ওয়ার্ডের অলিগলিতে পৌঁছে গেছে। স্বাভাবিকভাবে মনেই হতে পারে, এই সাংসদের মৃত্যুতে দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকা দলীয় কোন্দলের অবসান হয়েছে। কিন্তু বাস্তবের চিত্রটা ভিন্ন। পুরো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব শোকাবহ পোস্টার, ব্যানারের আড়ালে রয়েছে আত্মপ্রচারণা। নিজ নিজ পাড়া-মহল্লায় নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ না হলেও চলছে দলীয় মনোনয়নের লড়াই। আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ১১ জন নেতা এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিও তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না। নীতিনির্ধারণী নেতাদের কাছে তদবিরের পাশাপাশি জনসমর্থন আদায়ের জন্য নানামুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন তারা।
এই আসনের এমপি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসলামুল হক গত ৪ এপ্রিল মারা যান। ইতোমধ্যে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। লকডাউনের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে না পারলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা বসে নেই। নিয়মিত রান্না করা খাবার বিতরণের মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ রাখছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক। দলের একটি অংশ তার পক্ষে নেমেছেন। আসলামুল হকের বড় ভাই জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল হক বেবু জানিয়েছেন, মনোনয়ন নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে মাকসুদা হকের। মাকসুদা তার স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য উপনির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ করছেন।
আসলামুল হকের বড় মেয়ে মাইশা হক বলেন, বাবা মারা গেছেন ৪০ দিনও হয়নি। তবে আল্লাহর হুকুম ও প্রধানমন্ত্রী চাইলে তার মা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিও এই উপনির্বাচনে অন্যতম শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনি জানান, এই আসন থেকেই তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু। এ কারণে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই প্রার্থী হওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করছেন।
এস এম মান্নান কচি পোশাক প্রস্তুতকারক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি। তিনি বলেন, জাতীয়ভাবেই আসনটির গুরুত্ব অনেক। তাই উপনির্বাচনে অতিথি প্রার্থীকে দলের মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হবে না।
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন। তিনি জানিয়েছেন, সংরক্ষিত আসনের এমপি থাকাকালে তিনি এই আসনে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। মানুষের বাড়ি বাড়ি গেছেন। এ কারণে তার একটি স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। তা ছাড়া গত সংসদ নির্বাচনে তিনি ছিলেন দলের অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী। এবার তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলও এই আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিনই মানুষজন আমার কাছে আসছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলছি না। প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেলে উদ্যোগী হবো।
আওয়ামী লীগের অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মাজহারুল আনাম। তিনিও সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তার ভাষায়, তিনি সংসদের গত তিনটি নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবার নিশ্চয়ই তাকে নিরাশ করবেন না। এবিএম মাজহারুল আনাম দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি।
শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টুও নির্বাচনে লড়তে চান। তবে তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন না। প্রধানমন্ত্রী তাকে ডেকে নিলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন। সেটা না হলে প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার দেওয়ান আবদুল মান্নানও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মিছিলে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ জন্য ইতোমধ্যে ফেসবুকে প্রচারণাও শুরু করেছেন। সবার দোয়া চাইছেন।
এ ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফ এবং অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। এ ছাড়া এই আসনে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা কিংবা শীর্ষ পর্যায়ের একজন ব্যবসায়ী নেতারও প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত বছরের তুলনায় ত্রাণ ও ইফতারসামগ্রীর পরিমাণ বেড়েছে প্রয়াত আসলামুল হকের আসনে। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ ত্রাণ ও ইফতারি নিয়ে অলিগলিতে পৌঁছে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এসব কার্যক্রম পরিচালনাকালে বড় করে স্থাপিত ব্যানারটিই সার্বিক উদ্দেশ্যের কথা বলে দেয়। অর্থাৎ মানবিক কাজের বাইরে মনোনয়নপ্রত্যাশাই বড় করে দেখানো হচ্ছে সেখানে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে দলের প্রার্থিতা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা লম্বা হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরও প্রকট রূপ নিতে পারে।
রাজধানীর শাহ আলী ও দারুসসালাম থানা, মিরপুরের অর্ধেক, রূপনগরের আংশিক, সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড এই আসনের আওতাধীন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসলামুল হক আসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপি প্রার্থী এসএ খালেককে পরাজিত করেছিলেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন।