নিজস্ব সংবাদদাতা : দ্বীপ জেলা বরিশাল ও ভোলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চার লেনের প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। তবে, সেতুটির নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে।সেতুটি নির্মাণ হলে এটিই হবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘ সেতু। বরিশাল বিভাগের পূর্ব অংশ ভোলা জেলা। মূল ভূখণ্ড থেকে এই জেলাকে আলাদা করেছে তেঁতুলিয়া নদী। প্রায় ৩ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জেলায় যাওয়ার একমাত্র উপায় নদীপথ। বরিশাল থেকে ভোলার ভেদুরিয়া যেতে লঞ্চে প্রায় দুই ঘণ্টা এবং স্পিড বোটে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগে। ভেদুরিয়া থেকে ভোলা সদর উপজেলায় যেতে প্রায় ৩০ মিনিট ব্যয় হয়।চার লেনের দীর্ঘ এ সেতু নির্মিত হলে রাজধানীর সঙ্গে ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২২টি জেলা সরাসরি সড়ক সংযোগের আওতায় আসবে। সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যাবে ভোলা ও বরিশালের মধ্যে যাতায়াতে। তাছাড়া ভোলা থেকে গ্যাস সরবরাহ করাও সহজ হবে।দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে ভোলা সেতু নির্মাণ হলে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়বে অন্তত আরো ১ দশমিক ২ শতাংশ। বাড়বে এ অঞ্চলের মাথাপিছু আয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নাগরিক সুবিধা। পদ্মাসেতুর অর্থনৈতিক অবদানেও এটি নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) জানিয়েছে, তারা সেতু নির্মাণের জন্য জরিপ করেছে এবং সেতুর সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করেছে। এ সেতু নির্মাণে প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যা নেই। এই সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বড় ধরনের অবদান রাখবে।
সেতুর সম্ভাব্যতা জরিপের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোলা থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নৌকা ও লঞ্চের উপর নির্ভরশীল, যা এই জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফেরি চলাচলে সমস্যা হলে মাঝে-মধ্যেই পণ্য আনা-নেয়ার সমস্যায় পড়তে হয় সবাইকে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি নির্মাণে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ডিপিপি প্রাথমিক যাচাইয়ের পর মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যোগাযোগ অবকাঠামোতে সরকার বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে যে সেতু প্রয়োজন, সেখানে সেটিই করতে চায় সরকার। ভোলা সেতু নির্মাণে আগে থেকেই সরকারের সিদ্ধান্ত আছে। এই সেতু নির্মাণ হলে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
ভোলা সেতুর ডিপিপি থেকে জানা যায়, ভোলা অংশে ভেদুরিয়া ফেরিঘাট থেকে বরিশাল অংশের লাহারঘাট ফেরিঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ হবে এ সেতু। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটির শ্রীপুর চরের প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত যাবে উঁচু সড়কের আকারে। মূল সেতু হবে ৮ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। সংযোগ সেতু হবে ১ দশমিক ০৬৪ কিলোমিটার, সংযোগ সড়ক দুই কিলোমিটার। নদীর তীররক্ষা কার্যক্রম চলবে চার কিলোমিটারজুড়ে। জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ৪৮৬ হেক্টর।
২০২৪ সালে সেতু নির্মাণ শেষ হলেই দৈনিক ছয় হাজার ৯৯০টি মোটরযান চলাচল করতে পারবে এটি দিয়ে। তবে পর্যায়ক্রমে ৫৭ হাজার মোটরযান চলাচলের আশা করছে কর্তৃপক্ষ।