দেশের সবচেয়ে বড় আম বাজার চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আমবাজারে বছরের অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় এসময়ে আমে ভরপুর থাকে। বাজারে তিল ধারনের তায় থাকে না। তবে অথচ এবছর আম বাজারে আসতে শুরু করলেও কঠোর লকডাউনের কারনে বাজার জমে উঠেছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলার আম ব্যবসায়ীরা। আমচাষী, ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, কঠোর লকডাউনের কারনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারীরা আসতে না পারার কারনে বাজারের এ বেহাল দশা। শনিবার (২৯ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমের ডালি নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দেখা নেয় ক্রেতার। আমের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের দেয়া সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের কারনে কানসাট আম বাজারের এই অবস্থা। কঠোর লকডাউনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বেপারীরা আসতে না পারায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা না পাওয়ার আশঙ্কায় আম পেকে গেলেও গাছ থেকে নামাচ্ছেন না চাষিরা। করোনার প্রভাব থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম নিতে অনিহা অনেক বেপারীর। কানসাট বাজারের আড়তদার হিমেল আলী জানান, আম চাষীরা লকডাউনের কারনে বাজারে আম নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে। অনেকের আম পেঁকে গেলেও লকডাউনের ভয়ে আম পাড়ছে না। কারন ক্রেতা না থাকলে আম পেড়ে কার কাছে বিক্রি করব? কয়েকদিন থেকে আড়তে বসে আছি। আমচাষীরা আম নিয়ে আসছে না। বাইরের ক্রেতা না আসায় দামও অনেক কম এই মূহুর্তে। আমচাষী রুবেল আহমেদ বলেন, কঠোর লকডাউনের কারনে একদিকে গাছে আম নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত মূল্য না পেয়ে হতাশ হচ্ছে আমচাষীরা। এবিষয়ে সরকার ও নীতিনির্ধারণী মহলকে গুরুত্ব দিয়ে পরবর্তী সীধান্ত নেয়া উচিত। ক্রেতারা বাহিরের জেলা থেকে যাতে আসতে পারে সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া দরকার বলেও জানান তিনি। আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, বাগান কেনা আছে, গাছেই আম পাকতে শুরু করেছে। পাড়তে পারি না বলে বাগানেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাজারে পাইকারী ব্যবসায়ীরা আসতে না পারার কারনে এই অবস্থা হয়েছে। কানসাট আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরী টিপু বলেন, অনলাইনে আম বিক্রির কথা বললেও তা সম্ভব নয়। কেননা, অনলাইনে মাত্র পাঁচ ভাগ আম বিক্রি হয়ে থাকে। বাকি ৯৫ ভাগ আম এ বাজার থেকেই বিক্রি হয়। বাইরের ব্যাপারীরা না এলে এ বাজার জমবে না। এই এলাকার আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। তাই প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আমের ব্যাপারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকার জন্য হোটেলগুলোতে ব্যবস্থা ও অনুমতি দেওয়া হয়। এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, প্রশাসনের আয়োজনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীদের জন্য করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের জন্য বিশেষ কয়েকটি হোটেলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেখানে অবস্থান করে তারা নিরাপদে আমের ব্যবসা করতে পারবে। উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় এবছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আম বাগানে প্রায় ২৭ লক্ষ গাছ থেকে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।