বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

যেসব কারণে খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে দেরি হচ্ছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ মে, ২০২১
  • ৩৩১ বার পঠিত
যেসব কারণে খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে দেরি হচ্ছে
ফাইল ফটো

অনলাইন নিউজ : উন্নত চিকিৎসা নিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে এত দেরি হচ্ছে কেনো? গত দু-তিন দিন ধরে এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। এ বিষয়ে সরকারও ইতিবাচক এবং নমনীয়। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? প্রকাশ্যে একরকম দৃশ্য, পর্দার আড়ালে ভিন্ন দৃশ্য নাকি! এসব নানা জল্পনা-কল্পনাই চলছে সবার মনে। রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, এ মুহূর্তে সরকারের রাজনৈতিকভাবে কোনো কৌশল, সমঝোতা বা শর্তারোপের বিষয়ে ভাববার কথা নয়। তারপরও রাজনীতির সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা থেকে সরকারকে অনেক কিছুই ভাবতে হচ্ছে হয়তো।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিষয়টি আমরা সার্বিকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই পর্যালোচনা করছি। আশা করছি, আজকালের মধ্যে এটি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক যে অবস্থা তাতে তার উন্নত চিকিৎসায় দ্রুত বিদেশ নেওয়া প্রয়োজন। তারা আশা করেন, এ ব্যাপারে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সরকার ও বিএনপি মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতির বাইরেও বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। কিছু আইনগত জটিলতা রয়েছে। আবার খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য এবং সিঙ্গাপুরের ভিসাসহ করোনার কোয়ারেন্টিনের বিধিবিধানের জটিলতা এবং দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার বিষয়টিও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসকদের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুর যাবেন, নাকি যুক্তরাজ্যে যেতে পারবেন- এসব নানামুখী জটিলতায় তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলীয় সূত্র আরও জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের যাওয়ার ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ আছে। অন্যদিকে বর্তমান শারীরিক অবস্থায় খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে বিমানে যেতে পারবেন কিনা- সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। যদিও তার চিকিৎসক তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। অবশ্য এসব নানামুখী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তারা এমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যাতে বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেওয়ার ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া যায়।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। সরকারের অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে আগামী রবি কিংবা সোমবারের মধ্যে বিদেশে নেওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

বিএনপি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাজ তারা অনেকটা এগিয়ে নিয়েছেন। আজ হয়তো লন্ডনের ভিসার জন্য আবেদন করা হবে। সে হিসেবে ভিসা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে নেওয়ার অন্যান্য কার্যক্রমও চূড়ান্ত করা হবে। তার সঙ্গে তিন থেকে চারজন সদস্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যাবেন। তাদের বিষয়েও সবকিছু ঠিক করা হয়েছে। দলীয় কোনো নেতাকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে না যাওয়ার জন্য উৎসাহী করা হচ্ছে। এরপরও দু-একজন নেতা তার সঙ্গে যাবেন বলে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, তার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। শুক্রবার দুপুরের পর তার অক্সিজেন প্রয়োজনীয়তা খুব কম ছিল। এ সময়ের বেশিরভাগটা তিনি অক্সিজেন সাপোর্ট ছাড়া স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিয়েছেন। তবে সকাল থেকে তিন-চার লিটার অক্সিজেন লেগেছে। তার ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশার অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৭ থেকে ওঠানামা করে।

শুক্রবার তিনি কিছুটা খাওয়া-দাওয়া করতে পেরেছেন, যা ভালো লক্ষণ। এদিকে তার ফুসফুসে যখন পানি জমে তখন তিনি কষ্ট পান। পানিটা বের করার পর তা লাল দেখায়, যা ভয়ের কারণ বলা যাবে না। এরপরও পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে ক্ষতিকর কোনো জীবাণু পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে তাকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাচ্ছে না।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খালেদা জিয়ার অন্যতম ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রখ্যাত বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। তার সঙ্গে ডা. মোহাম্মদ আল মামুনও ছিলেন। এ ছাড়া হাসপাতালে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করছেন মেডিকেল টিমের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। বৃহস্পতিবার যেমন ছিল আজ শুক্রবারও তেমনি রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।

সরকারের অনুমতি পেলে বিমানে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা বিএনপি চেয়ারপারসনের আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, সরকারের অনুমতির পরেই এ বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা ও দোয়াও চেয়েছেন তিনি।

পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে তার ভাই শামীম এস্কান্দার, ভাবি কানিজ ফাতেমা ও ভাইয়ের ছেলে অভিক এস্কান্দার হাসপাতালে যান। বিএনপি নেতাদের মধ্যে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মামুন হাসানসহ আরও অনেকে হাসপাতালে যান।

সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতেই খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করে বিদেশযাত্রার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। সরকার বিষয়টি ইতিবাচক এবং মানবিক দৃষ্টি দিয়ে দেখার কথা বললেও গতকাল রাত পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের সংশ্নিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। আবেদনে উল্লেখ করা মানবিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত দেবে বলে আশা করছে বিএনপি।

খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। এরপর এটি আর নবায়ন করা হয়নি। এখন দু’দিন আগে তার পক্ষে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশে এখন নাগরিকদের ই-পাসপোর্ট দেওয়া হয়। পুরোনো পদ্ধতির মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দেওয়া এখন একেবারে সীমিত করে আনা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। নবায়ন হয়ে যাবে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী বলেন, তারা পাসপোর্টের আবেদনটি পেয়েছেন। অফিস বন্ধ থাকায় এটি রি-ইস্যু করে দেওয়া যায়নি। তাকে পাসপোর্ট দেওয়া হবে না- এমন কোনো নির্দেশনা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশ পেলে পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়ন করে নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবউদ্দিন খোকন। পাসপোর্ট পেলেই ভিসার প্রক্রিয়া শুরু করবে তার পরিবার।

বিএনপির একজন নেতা জানান, ই-পাসপোর্ট করানোর জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট, চোখের স্ক্যান এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার পক্ষে এগুলো সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তার ক্ষেত্রে এসব শর্ত শিথিল করে কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে পুরোনো ধরনের মেশিন রিডেবল পাসপোর্টই নবায়ন করে দিচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে বলে তার পরিবারকে জানানো হয়েছে।

খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে প্রথমে লন্ডনে নিতে আগ্রহী। কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে। তবে খালেদা জিয়া আবেদন করলে যুক্তরাজ্য সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে যুক্তরাজ্য হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে। তার পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে সেখানে আলোচনা চালাচ্ছেন।

লন্ডনের বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বিষয়ও পরিবারের চিন্তায় রয়েছে। তবে এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ থেকে যাত্রী যাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে। এখন সৌদি আরব অথবা খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সুবিধাজনক কোন দেশ হতে পারে, তেমন বিকল্প দেশের কথাও এখন তার পরিবার এবং দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন, এমন ব্যক্তির সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ মানার নিয়ম রয়েছে।

খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৬ বছর এবং তিনি কিছুদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ফলে এখনকার শারীরিক অবস্থায় তিনি বিমানে দীর্ঘযাত্রা করতে পারবেন কিনা, সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান পরিবারের একজন সদস্য। তার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জটিলতাগুলোর উন্নতি লক্ষণীয়ভাবে ঘটছে না। প্রায় সবক্ষেত্রে আগের মতোই অবস্থা। সে জন্য তার বিমানে দীর্ঘযাত্রা নিয়ে এখনও সংশয় আছে। লন্ডনে যাওয়ার মতো দূরের যাত্রার সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে তারা আবারও সবকিছু পরীক্ষা করে দেখবেন বলে তিনি জানান। এই চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা এখন চলছে। সেগুলোর রিপোর্ট নিয়ে মেডিকেল বোর্ড আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। লন্ডনে বা অন্য কোনো দেশে নেওয়া হলে হাসপাতাল পাওয়া যাবে কিনা, সেই প্রশ্নও রয়েছে। তবে এ বিষয়টিও তারেক রহমান দেখছেন।

গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে সময় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে তার ফুসফুসে পাঁচ শতাংশ সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল। এরপর গত ২৫ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো কভিড-১৯ পরীক্ষা করা হলে সেখানেও তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। পরে জটিলতা দেখা দেওয়ায় গত ২৭ এপ্রিল থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com