শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৫ অপরাহ্ন

কলাবাগানে ‘ধর্ষণের’ পর হত্যার শিকার স্কুলছাত্রী আনুশকা নুর আমিন কে কুষ্টিয়ায় দাফন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৪৫৩ বার পঠিত

কুষ্টিয়ায়া সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদির কবরের পাশে শায়িত হলেন রাজধানীর কলাবাগানে বন্ধুর বাসায় গিয়ে ‘যৌন নির্যাতনে’ নিহত হওয়া মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিন (১৭)।শনিবার সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কমলাপুরের গোপালপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে গোপালপুর ঈদগাহ মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।এর আগে রাত ১টার দিকে ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে নেয়া হয় আনুশকার লাশ। ভোর থেকেই শত শত মানুষ তাকে শেষবার দেখতে ভিড় করেন। লাশ এসে পৌঁছানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়-স্বজনরা। বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন আনুশকার বাবা আল আমিন আহম্মেদ।দাফণ শেষে ধর্ষণের এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর সাথে জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। কমলাপুর বাজারে সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ এই মানববন্ধনে অংশ নেন। এ সময় ওই স্কুলছাত্রীর বাবা আল-আমিন আহম্মেদ, ছোট ভাই নিভানসহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। এমন ঘটনা যেন আর কারও সাথে না ঘটে সেজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।এছাড়া মামলায় ও সুরতহাল রিপোর্টে আনুশকার বয়স দুই বছর বাড়ানো হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদ জানান তারা।এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে আনোয়ার খান মেডিকেল হাসপাতালে ‘মৃত অবস্থায়’ নেয়া স্কুল শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিনের ময়নাতদন্ত শেষে ভুক্তভোগীর শরীরে ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন চিকিৎসকরা।শুক্রবার বিকালে ময়নাতদন্ত শেষ করার পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।এছাড়া ভুক্তভোগীকে উত্তেজক বা নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না তা রাসায়নিক পরীক্ষার নমুনা এবং সে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি না তা জানতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।ডা. সোহেল আরও জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়।এর আগে, ওই স্কুলছাত্রীর সঠিক বয়স নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণও সংগ্রহ করা হয় এবং পরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।এদিকে আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার আসামি ফারদিন ইফতেখার দিহান শুক্রবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।শুক্রবার বিকালে মামলাটির এজাহার আদালতে আসে। মামলার এজাহার গ্রহণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ।জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আ ফ ম আসাদুজ্জামানকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়ে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছে আদালত।আদালতে কলাবাগান থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (নারী ও শিশু) স্বপন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (রমনা বিভাগ) সাজ্জাদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগীর কথিত প্রেমিক ইফতেখার দিহানের বিরুদ্ধে তার বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করেন।তিনি বলেন, ‘এ লেভেলের ছাত্র দিহানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছি এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও তিন সন্দেহভাজনকে হেফাজতে নিয়েছি।’পারিবারিক সূত্র জানায়, গ্রুপ স্টাডির জন্য আনুশকা কলাবাগানে এক বন্ধুর বাসায় যায়। পরে দিহান মেয়েটিকে ‘ধর্ষণ’ করে এবং হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে চিকিত্সকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেন যে ভুক্তভোগীকে ‘মৃত অবস্থায়’ হাসপাতালে আনা হয়েছিল।আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, সদস্য সমাপ্ত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭৫ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮ জনকে গণধর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের পরে ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অন্য ১২ জন আত্মহত্যা করেছে।এছাড়াও, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনটি বলছে যে ১৬১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।আসক আরও বলছে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৬২৭টি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০ জন ছেলেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এবং ২১ জন নারী অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন।ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়।নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন ওই ধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।এর আগে, দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন না থাকায় গত ১৩ অক্টোবর ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com