বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নেশার ঘোরে মাদকাসক্ত ছেলে কর্তৃক মা-বাবাকে পিটানোর অভিযোগ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৮৭৩ বার পঠিত

 ফয়সাল আজম অপু : পঞ্চাশোর্ধ মাকে ময়েজ যখন প্রথম লাথিটা মারে, তখন তার মা ব্যথা পাননি। কেননা, তখনও তার বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি। তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি যে, নিজের পেটের ছেলে তাকে এভাবে মারতে পারে। এই ঘোর কাটতে অবশ্য বেশীক্ষণ সময় লাগে নাই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাতাড়ি আরও কিছু মার হজম করতে হল তাকে। এরপর ময়েজ গিয়ে মারতে শুরু করল নিজের জন্মদাতা পিতা জিল্লুরকে। মার খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়লেন জিল্লুর। ব্যথায় কাতরাতে লাগলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ঘর ছেড়ে পালাতে চাইলেন বৃদ্ধ জিল্লুর। কিন্তু, আহত স্ত্রীকে ফেলে তিনি পালিয়ে যেতে পারলেন না। কি, বিশ্বাস হচ্ছে না, এসব? এক বর্ণও বাড়িয়ে বলিনি আমি। ঠিক এমনি ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন রাঙ্গাপাড়া গ্রামে। এই গ্রামের অতি দরিদ্র কৃষক জিল্লুর রহমান। ৪ ছেলে আর ২ মেয়ে নিয়ে তার সংসার। নিজেদের কৃষি জমি তেমন না থাকায় কোন মতে টেনেটুনে সংসার চলে। অভাব থাকলেও সংসারে অশান্তি ছিল না। কিন্তু, হঠাৎ করেই দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। সব চেয়ে ছোট ছেলেটা ইদানিং বড়ই অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেছিল। লোকমুখে শোনা যায়, নেশাগ্রস্ত সে। আর এই নেশার টাকার জন্য প্রতিদিনই সে বাড়িতে অশান্তি তৈরি করতে থাকে। এক দিন বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙ্গে তো এক দিন বাড়ি থেকে জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে বিক্রি করে। নেশা উঠলে কাউকেই মানতে চায় না। নেশা উঠলে জলজ্যান্ত পশু হয়ে ওঠে সে। কেউ কিছু বললে তার উপরেই চড়াও হয়। তবে আর যাই হোক, তার মায়ের সাথে বেশী খারাপ ব্যবহার করেনি সে। গত ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জিল্লুর আর তার স্ত্রী মাগরিবের আযানের পর ঘরের ভিতর বসে খোশগল্প করছিলেন। হঠাৎ করেই ময়েজ এসে নেশা করার টাকা চায়। ঘরে টাকা না থাকায় সে তার বাবা মাকে বেদম মারপিট শুরু করে। এক পর্যায়ে সে তার বাবা মাকে ঘরের ভেতর আটক করে ঘরের কাঁথা বালিশ ও অন্যান্য জিনিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার বাবা মায়ের অপরাধজন্ম দিয়েছেন তারা, কিন্তু নেশার টাকা কেন দিতে পারে না তারা। এক পর্যায়ে ময়েজের বাবা মা এর চিৎকারে পাড়া প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে। খবর পেয়ে দ্রুত সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। বুদ্ধিমত্তার সাথে আগুন নেভায় ও সকলকে কোন বড় দুর্ঘটনা ছাড়াই উদ্ধার করে। আর কিছুক্ষণ দেরী হলেই হয়তো ঘটে যেত ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক ঘটনা। সন্তানের নেশার বলি হতেন বাবা মা। নেশাখোর ময়েজকে আটক করেছে পুলিশ। উত্তেজিত জনতা দুএক ঘা মেরেছেও তাকে। এই ঘটনার পর বাকরুদ্ধ ময়েজের মা। উদভ্রান্ত চোখে চেয়ে আছে তার বাবা। এলাকাবাসী ময়েজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। এত কিছুর পরও অঝোরে কাঁদছেন ময়েজের মা। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, ব্যথা লাগে নি তো বাবা?’ সে যাই হোক। নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। হয়তো ময়েজের শাস্তিও হবে। কিন্তু, এ শাস্তি কি হচ্ছে শুধু ময়েজের? বাস্তবিক অর্থে এ শাস্তি হচ্ছে, তার পুরো পরিবারের। আসুন আমরা সচেতন হই। সন্তানের গতিবিধির প্রতি আরও নজর রাখি। নইলে এক দিন পুরা জাতিকেই পস্তাতে হবে জানালেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব বিপিএম পিপিএম (বার)।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com