বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন

ভোলাহাটে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ী নির্মাণে নানা অনিয়ম দূনীর্তির অভিযোগ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১
  • ২৪০ বার পঠিত

 ডি এম কপোত নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ভোলাহাট উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৬০ টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪১১ টি ও তৃতীয় পর্যায়ে ৪০০ টি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ কিছু দায়িত্ব শীলদের লোভের আগুনে পুড়ে অঙ্গার হবার আশঙ্কায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার দরিদ্র মানুষের সোনালি স্বপ্ন। বিনা মূল্যে জমিসহ পাঁকা ঘরের মালিক-এমন স্বপ্ন দেখতে কার না ভালো লাগে। তবে স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে ফারাক অনেক। কিন্তু কে জানত দরিদ্র মানুষের সাধ আর সাধ্যের সেতুবন্ধন গড়ে দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহ হীনদের এই স্বপ্নপূরণের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ভোলাহাট উপজেলায় পাওয়া ঘর এখন যেন তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসার আশংকা দেখা দিয়েছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে তারা যে ঘর পাবেন তা কিছু দায়িত্ব প্রাপ্তদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাড়ি নির্মাণে নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এতে যে কোনো বৈরী আবহাওয়ায় তা ধ্বসে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে ভোলাহাট উপজেলায় সব থেকে বেশী সংখ্যক ভূমিহীনদের গৃহ উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গরীব মানুষকে দেয়া উপহারের বাড়ী নির্মাণে নানা অনিয়ম দূনীর্তির অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। রোববার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে ১,২ ও ৩ নাম্বর ইট। এর মধ্যে ২ ও ৩ নাম্বর ইট বেশী নামকাস্তে ১ নং ইট রয়েছে। ভরাট বালি দিয়ে ইটের গাঁথনি ও প্লাস্টার করা হচ্ছে। বাড়ি দেয়ালে হাত অল্পতেই নড়েচড়ে উঠে। এদিকে যে সকল উপকারভোগী বাড়ী পাবেন তাদের দিয়ে ঘরের মেঝে ভরাট করিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও টিন সেট করতে নিন্মমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশ ঘর দিয়ে পানি পড়ছে। পলিথিন দিয়ে পানি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছেন অনেকেই। ভোলাহাট সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের চৌটাদহে ২০টি বাড়ী নিমার্ণ হচ্ছে। সেখানে গিয়ে ঘর নির্মাণে নিয়োজিত রাজমিস্ত্রী মো.হাসনাত জানান, ২ ও ৩ নং ইট দিয়ে বাড়ি গাঁথা হচ্ছে। অপর একজন মিস্ত্রী আব্দুল বাশির বলেন, ১ ও ২ নং ইট দিয়ে বাড়ি নিমার্ণ করা হচ্ছে। মিস্ত্রী হেল্পার দিয়ে তড়িঘড়ি করে পলেষ্টার ও ইট গাঁথার কাজের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদিকে বালি ও সিমেন্টের ভাগে রয়েছে অনিয়ম। উপকার ভোগি মাজিরন জানান, আমি ৩ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে ঘরের মেঝে ভরাট করেছি। তিনি বলেন, মেঝে ভরাট করতে বলেছে অফিসের লোকজন। সবাই নিজ খরচে ঘরের মেঝেতে মাটি ভরাট করেছেন। গোহালবাড়ী ইউনিয়নের হলদেগাছীতে মোট ১৩ জন ভূমিহীন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার। ঘরে উঠতে উঠতেই ফাঁটল ধরেছে। উপজেলা প্রকল্প অফিস থেকে তড়িঘড়ি মেরামতের কাজও শুরু করেছেন। হলদেগাছীর কালু বলেন, আমার ঘর ভেঙ্গে গেলে অফিস থেকে মিস্ত্রী পাঠিয়ে মেরামত করে দেন। তিনি বলেন, আমার পাশের বাড়ীটিও ফাঁটল ধরেছে। এদিকে দলদলী ইউনিয়নে পঞ্চানন্দপুর মাঠপাড়া গ্রামে দেয়াল গাঁথা শেষ হতে না হতেই ফাঁটল ধরেছে। সেখানে মেরামতও চলছে লুকোচুরির অন্তরালে। জামবাড়ীয়া ইউনিয়নের আন্দিপুর গ্রামের চিত্র একই। ভোলাহাটের যেদিকে চোখ যাবে ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম-দূর্নীতির পাহাড়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। উপকারভোগি রহিমা বলেন, ঘরের ভেতরে এখন শুয়ে থাকতে ভয় লাগছে। পানি বা বাতাস হলে কখন বুকের উপর ভেঙ্গে পড়ে। বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতর পানি পড়ে। উপরে পলিথিন দিয়ে পানি থেকে সাময়িক রক্ষা হচ্ছে। ঘরে টিনের ছাউনিতে যে সব কাঁঠ দেয়া হয়েছে ঐ কাঁঠ পোঁকাতে খেয়ে কাঠের গুড়ো বিছানাই পড়ে খাবার ও বিছানা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নকশাবহির্ভূতভাবে নিন্মমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এগুলো পরিণত হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ আবাসস্থলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে যে ঘর দেয়া হবে গরিবের সেই ঘর নির্মাণে চুরি নয়, যেন ডাকাতি হচ্ছে। এই ঘর নির্মাণের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হচ্ছে কোনো মজবুত ভিত্তি নেই। দেড় ফুট পরিমাণ ইটের ১০ ইঞ্চি গাঁথুনি দেয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ঘরেই তা দেয়া হচ্ছে না। কোনো ঘরে এক ফুট আবার কোনো কোনো ঘরে মাটির লেভেলেই দুটি করে ইট বিছিয়ে তার উপর থেকেই ৩ ইঞ্চি গাঁথুনি দিয়ে দেয়াল তোলা হয়েছে। এতে অল্পমাত্রার ভূমিকম্প কিংবা টানা বৃষ্টিতেও এই ঘর ধ্বসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে জড়িত থাকা একজন অভিযোগ করে বলেন, খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর উপহারে অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাউছার আলম সরকার জানান, বাড়ী নির্মাণে সরকারের ডিজাইন ভুল ছিলো। অল্প টাকায় এ বাড়ী নির্মাণ সম্ভব নয়। তবে অনিয়ম-দূনীর্তির বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং যে সব বাড়ীতে ফাঁটল ধরেছে বা ভেঙ্গে গেছে সেগুলো মেরামতের পর সংবাদ প্রকাশ করার অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অনিময়-দূনীর্তির বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, যে সব কাজ হয়েছে সব মানসসম্মত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোন অভিযোগ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com