শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

মাস না পেরুতেই আগের রূপে রাজধানীর গণপরিবহণে চলছে নৈরাজ্য নিয়ম মানার বালাই নেই, আছে ভাড়ার ভোগান্তি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১
  • ৮৫১ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক : মাস না পেরুতেই আগের রূপে ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীর গণপরিবহন। প্রতিটি গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হলেও আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। করোনা মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে সরকারের যেসব শর্তে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছিল এক মাসের মাথায় সেসব শর্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে শুরু করেছে পরিবহন চালক ও মালিকরা। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। শুধু বাস ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া কোন নিয়মই মানছে না তারা। করোনার কারণে সাধারণ মানুষের যেমন আয় কমেছে তেমনি পরিবহনে বাড়তি ভাড়ার কারণে বেড়েছে ভোগান্তিও। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
ভাড়া আদায় নিয়ে প্রতিনিয়তই যাত্রীদের সঙ্গে বাস কন্ডাক্টর ও হেলপারের সঙ্গে বাকবিত-া হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘটছে হাতাহাতি-মারামারির মত ঘটনাও। রাজধানীর গুলিস্তান, ধানমন্ডি, মিরপুর, শাহবাগ, যাত্রাবাড়িসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। প্রতিদিনই দেশজুড়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। কয়েকদিন আগে নতুন করে জারি করা প্রজ্ঞাপনে চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর মধ্য দিয়ে চলতি বছরে এ বিধিনিষেধ ১০ম বারের মতো বাড়ানো হলো। তবুও মানানো যাচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। নিশ্চিত হয়নি মাস্ক পরাও। ভাটা পড়েছে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বে। এর আগে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে সরকার চলতি বছর প্রথমে ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছিল। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় গত ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। সেটি পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আবার তা ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল গণপরিবহন। পরে ১ জুন থেকে দেশব্যাপী গণপরিবহন চালু হয়।
পাঁচটি নির্দেশনা দিয়ে গণপরিবহন চলাচলের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। নির্দেশনায় বলা হয়, কোনোভাবেই মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। সমন্বয় করে ৬০ শতাংশ বাড়ানো ভাড়ার বেশি আদায় করা যাবে না। যাত্রার শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। চালক, অন্যান্য শ্রমিক, কর্মচারী ও যাত্রীদের মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয় প্রজ্ঞাপনে। কিন্তু গণপরিবহন চালুর এক মাসের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে নৈরাজ্যের চিত্র। রাজধানীর বেশির ভাগ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও যাত্রী নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছামতো। কোনো কোনো বাসে দেখা যাচ্ছে সব আসন ভরেই নেওয়া হচ্ছে যাত্রী। কিছু আসন শূন্য থাকলেও দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে কোনো কোনো বাসে। এছাড়া মাস্ক পরছেন না অনেক যাত্রী। চালক-সহকারীদেরও একই অবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও বাড়তি ভাড়া আদায়ে কোনো ব্যতয় হচ্ছে না।
এ বিষয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি, যাত্রীদের সব অভিযোগ সত্য নয়। আমরা গেট বন্ধ করে গেলেও অনেকে জোর করে গাড়িতে উঠেন। কিছু বলতে পারি না। সবারই তো ঘরে ফিরতে হবে। একারণে মানবিক দিক বিবেচনায় কিছু যাত্রী নিতে হয়। সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে। এই নিয়মে যাত্রী এবং আমাদের সবারই ক্ষতি হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল দুপুর তিনটায় সাভার থেকে সাইনবোর্ড এলাকায় লাব্বাইক পরিবহনে এক যাত্রীর সাথে কন্ডাক্টরের ভাড়া নিয়ে ঝগড়া চলছে। কন্ডাক্টরের দাবি সাভার থেকে ফার্মগেট আগে ভাড়া ছিল ৪০ টাকা কিন্তু ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির কারণে বর্তমান ভাড়া ৬৫ টাকা দিতে হবে। এদিকে যাত্রী বলছেন সব সিটে দু’জন করে যাত্রী বসে আছে, তাহলে আমি ২৫ টাকা ভাড়া বেশি কেন দেব? দশ টাকা বেশি নিতে পারেন। কিন্তু কিছুতেই মানছে না কন্ডাক্টর। তাকে ৬৫ টাকাই দিতে হবে। এক পর্যায়ে ক্ষেপে যান ওই যাত্রী। দু’জনের তর্কাতর্কির মধ্যে বাস আসাদ গেট চলে আসে। এ সময় ওই যাত্রী তার বন্ধুকে ফোন করে ফার্মগেট ওভারব্রিজের নিচে আসতে বলেন। এরপর বাস ফার্মগেট আসলে দু’জনে মিলে কন্ডাক্টরকে নামিয়ে চড়, থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারেন। এরপর পরিস্থিতি খারাপ বুঝে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে পরিবহনটি।
গণমাধ্যকর্মী বাবুল অভিযোগ করে বলেন, ‘শনির আখড়া থেকে গুলিস্তান শ্রাবণ পরিবহনে আগে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। যাত্রী কিন্তু আগের মতই নেওয়া হচ্ছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। শুধু বাস ভাড়াটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা যাত্রীদের হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না।’ সাইনবোর্ড থেকে গুলিস্থান লাব্বাইক ও লাভলি পরিবহনে নিয়মিত যাতায়াত করেন মো. আরিফুর রহমান। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সাইনবোর্ড থেকে কারওয়ান বাজার আগে ভাড়া ছিল ৩০ টাকা, আর এখন নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। তারপরও নিয়মের বালাই নেই। আগের মতই দুই সিটে যাত্রী নিচ্ছে তারা। এমনকি মাঝে মাঝে দাঁড়িয়েও যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। কিছু বললে উল্টো বলে- ভালো না লাগলে গাড়ি থেকে নেমে যান।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘যখন বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল তখনও আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম, আমরা বলেছিলাম, যেই ভাড়াটা বাড়ানো হয়েছে এটা বাস্তবায়ন করা কখনোই সম্ভব না। এখন সেটাই সত্যি হলো। ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এটা মানিনা এবং মানছি না। জরুরি ভিত্তিতে এটা প্রত্যাহার করে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হওয়া উচিত। সরকারের কাছে আমরা পূর্বের ভাড়ায় ফেরত আসার জন্য দাবি জানাই’।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com