কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা : কেরানীগঞ্জে এক নারীর কাছ থেকে দুই দফায় (৫০ হাজার ও ২০ হাজার) ৭০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন বলে সাংবাদিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ৭০ হাজার টাকা নিয়েও তারা ক্ষান্ত হয়নি, আরো ৩০ হাজার টাকার জন্য গভীর রাতে ওই নারীর বাসায় ঢুকে ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করে তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। টাকা না দিলে ওই নারীর কলেজপড়ুয়া দুই ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে বাসার মধ্যেই ওই নারীর ১১ বছরের নাতিকে তারা মারধর করে। এমন অভিযোগ জানিয়ে ভুক্তভোগী নারী মুক্তা বেগম শনিবার (৮ মে) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মুক্তা বেগম জানান, আগে তিনি বাসায় মেয়ে নিয়ে ব্যবসা করতেন। বিষয়টি টের পেয়ে যায় কথিত সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন। পরে ওই সাংবাদিক তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে রিপোর্ট করার ভয় দেখিয়ে দুই দফায় ৭০ হাজার টাকা চাঁদা নেয়। কিছুদিন পর তিনি ওই ব্যবসা বন্ধ করে দেন। কিন্তু জয়নাল আবেদীন টাকার জন্য তাকে বার বার ফোন দিয়ে হুমকি দিতে থাকে। তিনি টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে তাকে পুলিশ দিয়ে দুইবার ধরিয়ে দেয় জয়নাল আবেদীন। কিছুদিন আগে তিনি জামিনে মুক্তি পান। জেল থেকে বেরোনোর পর জয়নাল পুনরায় চাঁদা দাবি করে অন্যথায় আবারও পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তিনি বাসা পরিবর্তন করে চড়াইল দারুসসালাম এলাকায় চলে আসেন। কিন্তু নাছোরবান্দা জয়নাল আবেদিন সেই বাসা খুঁজে বের করে ফেলে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জয়নাল আবেদীন, এশিয়ান টিভির কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি শেখ ফরিদ, বিটিভির ক্যামেরাম্যান পরিচয় দেওয়া রাশেদুজ্জামান রাসেল মুক্তা বেগমের চড়াইল দারুসসালামের ভাড়া বাসায় জোর করে ঢুকে পড়ে। এসময় ক্যামেরা দিয়ে ঘরের চারপাশ ভিডিও করতে থাকে।
এসময় আগতরা জানায়, সামনে ঈদ আমাদের তিনজনকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। নইলে র্যাব-পুলিশ দিয়ে হয়রানিসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হবে। এক পর্যায়ে তারা মুক্তা বেগমের ১১ বছরের নাতিকে কয়েকটি চড়ধাপ্পড় মারে। এসময় তাদের ডাকচিৎকারে প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কথিত ওই সাংবাদিকদের আটক করেন। পরে তারা এ ঘটনায় ক্ষমা চাইলে এলাকাবাসী তাদের ছেড়ে দেয়। পর দিন তারা মুক্তা বেগমের মোবাইলে বার বার কল করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চায়। চাঁদা চাওয়ার কথোপকথন মুক্তা বেগম মোবাইলে রেকর্ড করেন। রেকর্ডের ৩টি অডিও ক্লিপ তিনি কলের কণ্ঠ প্রতিনিধির কাছেও হস্তান্তর। মুক্তা বেগম অভিযোগ করে আরো বলেন, এসব ঘটনার পরও তারা চাঁদা চেয়ে হুমকি দিচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত জয়নাল আবেদীন ‘দি ডেইলী ট্রিবিউনাল’ নামে একটি অনলাইন পত্রিকার কাজ করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি শেখ ফরিদ ও রাশেদুজ্জামান রাসেল।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকায়। ভুক্তভোগীরা ভুল করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তাদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।