চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : চট্টগ্রামে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্র। কাউন্টারে নয়, গত কিছুদিন ধরে টিকিট মিলছে কালোবাজারে। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় ট্রেনের টিকিটের চাহিদা বেড়েছে। অধিকাংশ যাত্রীকে কালোবাজারিদের কাছ থেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে রেলের কিছু অসাধু বুকিং সহকারী, নিরাপত্তা বাহিনী ও জিআরপি থানা পুলিশের কিছু সদস্য, রিয়াজুদ্দিন বাজারের দোকান কর্মচারী, স্টেশন এলাকার পান দোকানি ও হকারদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।গত ৩০ মার্চ রাতে নগরীর রেলওয়ে থানা পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার করা হয় তিন টিকিট কালোবাজারিকে। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ট্রেনের টিকিট উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ফয়সাল ও মজনু মিয়াকে। তাদের কাছ থেকে চাঁদপুরগামী ছয়টি টিকিট উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, চাঁদপুরগামী সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৬৫ টাকার একটি টিকিট ৩০০ টাকায় বিক্রির সময় ফয়সালকে ছয়টি টিকিটসহ গ্রেফতার করা হয়। ফয়সাল জানায়, তাকে এসব টিকিট দিয়েছেন মজনু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। তার তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিন রাতে স্টেশন এলাকা থেকে মজনু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। মজনু মিয়া জানিয়েছেন, রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব টিকিট বিক্রির জন্য তাকে দিয়েছেন।
একই দিন ৮টি ঢাকাগামী তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটসহ এক কালোবাজারিকে গ্রেফতার করে রেলের নিরাপত্তা বাহিনী। কিছুদিন আগে গত ৯ মার্চ কোতোয়ালি থানার স্টেশন রোড এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক টিকিট কালোবাজারিকে গ্রেফতার করে সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ২০টি টিকিট জব্দ করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, ‘টিকিট কালোবাজারি গ্রেফতারের ঘটনায় করা মামলায় তদন্ত চলছে। এতে রেলের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাকেও মামলায় আসামি করা হবে। আমরা টিকিট কালোবাজারি রোধে স্টেশন এলাকায় সতর্ক আছি। স্টেশনের বাইরে টিকিট কালোবাজারি হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই।’
এদিকে স্টেশনে চাহিদার টিকিট না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন যাত্রীরা। নগরীর জামালখান হেমশেন লেইন এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, ব্যবসার কারণে আমাকে প্রতি মাসে কয়েকবার করে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে হয়। করোনাপরবর্তী ট্রেনে যাত্রী পরিবহণ শুরুর পর টিকিটে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। স্টেশনে পাঁচদিন আগে টিকিট দেওয়া হলেও যেদিন টিকিট ছাড়া হয় সেদিন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। তবে দ্বিগুণ কিংবা আরও বেশি দামে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কালোবাজারিদের কাছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে যাত্রীদের কাছে চাহিদা বেশি ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করা এসব ট্রেনের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ছয়টি, দুটি সিলেট, একটি ময়মনসিংহ ও একটি চাঁদপুর রুটে চলাচল করে। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নাজিরহাট, দোহাজারি, ঢাকা, সিলেট, চাঁদপুর ও ময়মনসিংহে বেশ কয়েকটি লোকাল ট্রেন চলাচল করে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ‘ট্রেনের কেউ টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত কিনা তা আমার জানা নেই। তবে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি। কেউ কালোবাজারিদের হাতে যাতে কৌশলে টিকিট দিতে না পারে। তবে ট্রেনের টিকিটের যাত্রীদের চাহিদা অনেক। যে পরিমাণ আন্তঃনগর ট্রেন আছে এর চেয়ে দ্বিগুণ ট্রেন বাড়লেও চাহিদা কমবে না। তিনি জানান, বর্তমানে টিকিটের ৫০ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। বাকি ৫০ শতাংশ মিলছে কাউন্টারে। এদিকে অনলাইনের টিকিটও কালোবাজারি চক্রের হাতে রয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ যাত্রীদের।