বিনোদন নিউজ : চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী তফসিলের ১০ নম্বর ধারা মোতাবেক বিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচনের আপিল বোর্ড। নোট দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ ছিল জায়েদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিপুণ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একইসঙ্গে কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদের প্রার্থী চুন্নুর প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়েছে। তাই চুন্নুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাদির খানকে কার্যকরী সদস্য হিসেবে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
সন্ধ্যায় আপিল বোর্ডের সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বোর্ড চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ ও একইদিনে ফলাফল জানিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফলাফল জানানো হয় পরদিন ভোরে। এতে পরিস্কার হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুন পক্ষপাতিত্ব করেছেন। এর মধ্যে দুজন ভোটার লিখিতভাবে জানিয়েছেন নগদ অর্থের বিনিময়ে তারা জায়েদ খান ও চুন্নুকে ভোট দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ভিডিও ফুটেজেও আমরা সেটার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি। তফসিলের ১০ নম্বর ধারা অনুযায়ী এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। আমরা সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছি। জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক এবং চুন্নুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাদির খানকে কার্যকরী সদস্য হিসেবে জয়ী ঘোষণা করা হলো। ’
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিপুণের নাম ঘোষণা করার পর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘সত্যের জয় হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি সকাল থেকে আমি যে যুদ্ধ শুরু করেছিলাম আজ সেটার ফল পেলাম। নির্বাচন কমিশনারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছি অনিয়মগুলো। কিন্তু তারা আমার পাশে দাঁড়ায়নি। অবশেষে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। ’
আপিল বোর্ডের রায়ের পর মুঠোফোনে জায়েদ খান বলেন, ‘আপিল বোর্ডের কোনো ভ্যালু নেই। তারা এরকম কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না৷ এটা আইন বহির্ভূত। পৃথিবীতে এমন নজিরবিহীন ঘটনা আগে ঘটেনি যে প্রজ্ঞাপনের পর মৃত আপিল বোর্ড রায় ঘোষণা করে। ’
মামলা করার কথাও বললেন অভিনেতা, ‘আমি মামলা করব। আদালতে যাব। ’
আজকের এই আপিল বোর্ডের বৈঠকে যাবেন না, আগেই জানিয়েছিলেন জায়েদ। শুক্রবার কালের কণ্ঠকে জায়েদ বলেছিলেন, ‘নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি বিকাল ৫টার পর থেকে আপিল বোর্ড মৃত। একটি মেয়াদোত্তীর্ণ সংস্থা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে, যার কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই। শনিবারে নাকি একটি বৈঠক ডেকেছে সেখানে আমাকেও উপস্থিত থাকতে হবে, এই মর্মে আমার পিয়নের কাছে চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে। আপিল বোর্ড ২৯ তারিখ বিকেল পাঁচটার পর আপত্তি নিষ্পত্তি করেছে নিপুণ পরাজয় মেনে নিয়ে সাক্ষর করে চলে গেছে। এখানেই আপিল বোর্ডের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ’
২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন ইলিয়াস কাঞ্চন। সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী করা হয় জায়েদ খানকে। নির্বাচনের দিনই গণমাধ্যমে জায়েদের বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেল জায়েদ ভোট পেয়েছিলেন ১৭৬টি, নিপুণ পেয়েছিলেন ১৬৩টি। এর মধ্যে ২৬টি বাতিল বলে গণ্য করা হয়। নিপুণের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৯ জানুয়ারি পুরনরায় ভোট গণনা করা হয়। দ্বিতীয় বার গণনায় নিপুণের ১৪টি ও জায়েদের ১২টি ভোট অকার্যকর হয়েছে। তাতেও জায়েদ খানকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নিপুণ থেমে থাকেননি। বিজয়ী জায়েদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনাসহ নানা নির্বাচনী তফসিলবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করেছেন প্রতিপক্ষ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ আক্তার। শুধু জায়েদ খান নন, কার্যকরী পরিষদ সদস্য পদে নির্বাচিত চুন্নুর বিরুদ্ধেও নির্বাচনী আচরণবিধি না মানার অভিযোগ এনেছেন নিপুণ।
এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর আপিল বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে। আজ শনিবার বিষয়টির সুরাহা করতে বিকেল ৫টায় শিল্পী সমিতির অফিসে জরুরি বৈঠক ডেকেছে এই বোর্ড। সেখানেই আজ প্রার্থিতা হারালেন জায়েদ খান ও চুন্নু এবং বিজয়ীর মালা পরলেন নিপুণ ও নাদির খান।