বিডি ঢাকা ডেস্ক
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে জমে উঠেছে কানসাট আম বাজারের কেনাবেচা। প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ আম বিক্রি হচ্ছে এই বাজারে। তবে দীর্ঘ তাপপ্রবাহের কারণে এবার কয়েক জাতের আম একসঙ্গে পেকেছে। ফলে সরবরাহ বেশি। তাই এই বছর ফলন ভালো হলেও গতবারের তুলনায় ভালো দাম পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা।
সরেজমিনে কানসাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডালিতে আম সাজিয়ে ভ্যানে করে আম বাজারে নিয়ে এসেছেন শতাধিক আমচাষি। বাজারে প্রবেশের জন্য ছোট ছোট সরু গলিপথে অপেক্ষা করছে আমবোঝাই ভ্যান। তবে চাষিদের চোখে-মুখে হতাশার চাপ।
শিবগঞ্জের আম ব্যবসায়ী মো. মিটুল খান বলেন, এবার আম প্রচুর, কিন্তু দাম নেই। ইদের আগে আম পাকছে। মানুষ কোরবানি দিবে, না আম কিনবে? একটা বাগান কিনেছি, মনে হচ্ছে খরচই উঠবে না।
তিনি জানান, এবার প্রতিমণ ল্যাংড়া আম ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একই বাজারে হিমসাগর আম ক্যারেটপ্রতি কিনেছেন মো. সেলিম নামের একজন ক্রেতা। প্রতি ক্যারেটে ২২-২৩ কেজি করে আম, দাম পড়েছে ৮০০ টাকা। তিনি জানান, আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠানোর জন্য টাটকা কাঁচা আম কিনেছেন। বাজারে আমের দাম কম, তবে কুরিয়ার খরচ বেড়েছে।
কমলাকান্তপুরের আম চাষি সারওয়ার জাহান সোহাগ জানান, এবার তার বাগান থেকে খিরসাপাত ১৮০০ টাকা, বোম্বাই ১৪০০ টাকা ল্যাংড়া ১৪০০টাকা বিভিন্ন গুটিজাতের আম ৮০০ টাকা করে তিনশত মন আম বিক্রি করেছেন। মাসুদ হাসান নামে আরেক আমচাষি বলেন, খিরসাপাত আম এখন শেষের দিকে। অনান্য বছরে এই সময় খিরসাপাত আমের দাম থাকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা মণ। কিন্ত খিরসাপাত আম শেষের পথে থাকলেও এই জাতের আম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৮০০ থেকে ২৮০০ টাকা মণে।
মো. বকুল নামে আরেক আমচাষি বলেন, খিরসাপাত আম ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। আমে অনেক লস হচ্ছে, এই দামে আম বিক্রি করলে কিটনাশক খরচ উঠবে না।
কানসাট বাজারে দীর্ঘদিন আমের আড়ৎদারি করেন আব্দুল মানিক। তার নিজেরও আমের বাগান রয়েছে। তিনি জানান, খিরসাপাত আম ১৮০০ থেকে ২৮০০ টাকা মণে কেনাবেচা হচ্ছে এবং ল্যাংড়া কেনাবেচা হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা মণ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ইদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির কারণে ঢাকায় অনেক আম গিয়ে জমা হয়ে আছে। ঢাকাবাসী নিজ নিজ এলাকায় ইদের ছুটিতে আসার কারণে এই সমস্যাটি সৃষ্টি হয়ছে। এ ছাড়া আমের দাম গতবারের তুলনায় কম আছে। তবে এ বছর সার, কীটনাশক বা ছত্রাকনাশকের দাম এবং সেচ ও শ্রমিকের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনের খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন মিয়া বলেন, এ বছর আমের ফলন ভালো হয়েছে। তবে অনেক গরমের কারণে আমগুলো একসঙ্গে পেকে যাচ্ছে। এ ছাড়া ইদের দীর্ঘ ছুটিও আমের বাজারে একটা প্রভাব ফেলেছে। তবে আশা করছি, আমচাষিরা সামনের দিকে দাম ভালো পাবেন।
প্রসঙ্গত, কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার টন।