অনলাইন নিউজ : পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান-বারিধারা-বনানী-ধানমন্ডিতে বসানো হত মাদকের আসর। এসব পার্টিতে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলেন সদ্য গ্রেফতার হওয়া মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌসহ দেশি বিদেশি ৫০ জন। এসব কথিত মডেল ও র্যাম্প গার্লরা পার্টিতে অংশ নেওয়া অভিজাত শ্রেণির লোকদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকা-ের ছবি ও ভিডিও ধারণের পর ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।
মডেল পিয়াসা-মৌসহ দেশি বিদেশি এই ৫০ জন মডেল ও টিভি কর্মীর নাম পরিচয় এরই মধ্যে হাতে পেয়েছে র্যাব। তাদেরকে টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করতেন শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান নামে একজন। মিশু ও তার সহযোগী জিসানকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্যই জানিয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব।
যেভাবে গ্রেফতার হন মিশু ও জিসান: বুধবার বিকাল পৌনে ৬টার দিকে র্যাব সদর দফতরে এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকা- সম্পর্কে জানা যায়। র্যাব এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে (৩৯) আটক করা হয়।
এ সময় ১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদ, ১৩ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবা, একটি বিলাসবহুল ফেরারি মডেলের গাড়ি, সিসার সরঞ্জামাদি, ২টি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড, পাসপোর্ট এবং ভারতীয় জাল মুদ্রা ৪৯ হাজার ৫০০ রুপি উদ্ধার করা হয়।
উচ্চবিত্তদের পার্টিতে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ফাঁদ:
খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিযুক্তরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য প্রায় ১০-১২ জন। তারা গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করেন। এ জন্য তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পান। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া বিদেশেও প্রমোদ ভ্রমণের আয়োজন করা হতো। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টি আয়োজন করা হতো।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকদের টার্গেট করে আসর বসানো হতো। এই চক্রের ক্লায়েন্টের তালিকায় পিয়াসা-মৌসহ দেশি-বিদেশি ৫০ জনের নাম পাওয়া গেছে। যাদের বিদেশেও প্রমোদ ভ্রমণের আয়োজন করে পাঠানো হতো। পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের চাহিদা বা পছন্দের গুরুত্ব দেওয়া হতো। একইভাবে উচ্চবিত্তের প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টি আয়োজন করে পিয়াসা-মৌয়ের মতো কথিত মডেলদের পাঠানো হতো। তারা কৌশলে ক্লায়েন্টদের গোপন ছবি ধারণ করে অপব্যবহার করত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
অবৈধ আয়ের টাকায় গাড়ির ব্যবসা-গরুর ফার্ম:
র্যাব জানায়, এই অবৈধ আয় থেকে উপার্জন করা অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় (গাড়ির ব্যবসা, গাড়ি আমদানি ও গরুর ফার্ম) বিনিয়োগ করেছেন মিশু হাসান ও জিসান। এই ব্যবসায় তাদের গ্রুপের সদস্যদের অবৈধ আয়েরও বিনিয়োগ রয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান বাংলাদেশে নামীদামি ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবসা করেন। তিনি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নিতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তার ব্যক্তিগত ২টি রেঞ্জ রোভার, অ্যাকুয়া, ভক্স ওয়াগন ও ফেরারিসহ ৫টি গাড়ি রয়েছে। তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে গাড়ির ট্যাক্স জালিয়াতি করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া আটক জিসানের একটি গরুর ফার্ম রয়েছে। যেখানে তিনি অননুমোদিত ব্রাহমা জাতের গরু লালন পালন করেন।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, মিশু ইতিপূর্বে বিভিন্ন মামলায় তিনবার গ্রেফতার হয়েছিল। তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার সাথে বেশকয়েকজন চিহিৃত অপরাধীদের যোগাযোগ রয়েছে। মিশু ও তার সহযোগী জিসানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে, ভারতীয় জাল মুদ্রা রাখা ও অননুমোদিত গাড়ি আমদানি ও ব্যবহারের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক মামলা দায়ের করা হবে।