ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী মেঘলা চৌধুরী ইলমাকে হত্যার অভিযোগে তার স্বামী ইফতেখার আবেদিনকে আটক করেছে বনানী থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর বনানীতে স্বামীর ২ নম্বর রোডের ৪৪ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে। মেঘলার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির মানুষ এটাকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেছে। তবে মেঘলার পরিবার একে হত্যা বলে দাবি করেছে।
মেঘলাকে প্রথমে গুলশান ইউনাইটেড হসপিটাল লিমিটেডে নেওয়া হয়েছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
মেঘলা চৌধুরী ইলমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের (২০১৫-১৬) সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী। তার স্বামী ইফতেখার আবেদিন কানাডা প্রবাসী।
মেঘলার খালু ইকবাল হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, বিকেল ৪টার দিকে ওর (মেঘলা) শাশুড়ি তাকে ফোন করেন বলেন, সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আপনারা দ্রুত আসেন। আমরা বাসায় পৌঁছালে তার শাশুড়ি বলছিল ইলমার সেন্স নাই। পরে আমরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানালেন, তাকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার দেহে অসংখ্য মারধরের দাগ। আমরা ধারণা করছি, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা থানায় যাচ্ছি, মামলা করব।
মেঘলার সহপাঠী নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, মেঘলার বিয়ে হয় কানাডা প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই তাকে অনেক বাধ্যবাধকতার মধ্যে রাখা হতো। তার কোনো মোবাইল ছিলো না। সে পুরো ‘আউট অফ নেটওয়ার্ক’ ছিলো। পরীক্ষা দিতে আসতো শুধু ক্যাম্পাসে। বিয়ের আগে আমাদের সঙ্গে অনেক আড্ডা দিতো। কিন্তু বিয়ের পর তাকে পাওয়া যেতো না। পরীক্ষা দিতে আসলেও তার সঙ্গে একজন মানুষ থাকতো। মোটকথা তাকে অনেক মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রাখা হতো।
তিনি আরো বলেন, গত ১১ই ডিসেম্বর তার স্বামী ইফতেখার দেশে আসে। তারপর তাকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয় যে সে আজ (মঙ্গলবার) মারা যায়। আমরা এখনো তার ময়নাতদন্তের এখানে আছি। তার শরীরে যে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি তা মোটেও আত্নহত্যা না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। মেঘলাকে কয়েকদিন ধরে নির্যাতন করা হচ্ছিল এবং আজ তাকে খুন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে- মেঘলার মা ও আমাদের এমনটি জানিয়েছে।
মেঘলার বোন সম্পর্কীয় এক তরুণী গণমাধ্যমকে বলেন, এই ছেলের (মেঘলার স্বামী) সন্দেহ রোগ ছিল এটা আমরা পরে জানতে পারি। সাত দিনের মধ্যে যোগাযোগ হয়, বিয়ের জন্য প্রলোভন দেখায়। বলে, তোমাকে (মেঘলাকে) কানাডা নিয়ে যাব। তোমার ছোট বোনকে মেডিকেলে পড়াবো। ছেলেদের অবস্থা ওদের পরিবারের চেয়ে ভালো ছিল। আর ও-ও (মেঘলা) চিন্তা করে অভাব অনটনের মধ্যে বড় হয়েছে- ভেবেছে আমার হাজব্যান্ড যদি আমার পরিবারটাকে টেনে তুলে তাহলে ভালো। আর আমি যদি কানাডা যেতে পারি আমিও আমার পরিবারকে উপরে তুলতে পারব। এজন্য সে সাত দিনের মাথায় তার পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, আমি এই ছেলেকেই বিয়ে করব। শুধু ছেলে না ছেলের পুরো পরিবার ওকে প্রলোভন দেখায়। ছেলের বাবা, ছেলের মা। তারা অনেক কিছু গোপন রাখে। ছেলে যে একটা মানসিক রোগী, তার যে ট্রিটমেন্ট চলেছিল- এসব তারা গোপন রাখে। আমার সঙ্গে আমারে বোন মেঘলা চৌধুরীর সর্বশেষ দেখা হয় কোরবানি ঈদের দুইদিন পরে এবং আজকে (মঙ্গলবার) ফের দেখলাম। এর মধ্যে ওর সঙ্গে আমাদের কারো যোগাযোগ ছিল না। এতদিন ছেলে কানাডায় ছিল। ছেলে ১১ তারিখে বাংলাদেশে এসেছে। যেদিন দেশে এসেছে ওই দিন থেকেই মারপিট শুরু করে।
এ বিষয়ে বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, হত্যার অভিযোগে মেঘলার স্বামী ইফতেখার আবেদিনকে আটক করা হয়েছে। এখনো মেঘলার পরিবার কি কারণে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ করেনি। তবে আমরা ধারণা করছি পারিবারিক কলহের জোরে হত্যা করা হতে পারে। ময়নাতদন্তের পরেই জানা যাবে জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। এটি অন্তত মর্মাহত ঘটনা। নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও তার সহপাঠীরা সেখানে গিয়েছে এবং পরিস্থিতি জানছে। তার স্বামীকে হত্যার অভিযোগে বনানী থানা পুলিশ আটক করেছে। আইনি প্রক্রিয়া থেকে অন্যান্য কার্যাবলী সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঐ ছাত্রীর পরিবারকে সর্বাত্মক সহোযোগিতা করবে।