শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

আজ জেলহত্যা দিবস : ৮ পলাতকের সাজা কার্যকর হয়নি আজও

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১
  • ২০৯ বার পঠিত
আজ জেলহত্যা দিবস : ৮ পলাতকের সাজা কার্যকর হয়নি আজও
ফাইল ফটো

অনলাইন নিউজ : আজ ৩ নভেম্বর। জাতির জীবনে এক কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করে দুষ্কৃতকারীরা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতক দলের গঠিত মন্ত্রিসভায় যোগদানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এই চার নেতা। এরপর বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক সরকার তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। একপর্যায়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজকের দিনে চার নেতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘাতকদের পাঠানো হয় কারাগারে। হত্যা করার আগে সেখানে দায়িত্বরত কারারক্ষীরা বাধা দিলে মোশতাকের পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে ঘাতকদের কাজে সহায়তা করার। এরপর ঘাতকরা কারাগারের মতো সুরক্ষিত স্থানে গিয়ে চার নেতাকে একত্র করে গুলি চালিয়ে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে বেরিয়ে যায়।

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাণীতে বলেছেন, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার পাশাপাশি জাতিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘাতক চক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। কিন্তু তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন জাতির পিতা ও তার আদর্শ চির অমøান থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছেন, ‘কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যারই ধারাবাহিকতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতার জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি এখনো নানাভাবে চক্রান্তে লিপ্ত। এই অপশক্তির যেকোনো অপতৎপরতা, ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’

জেলহত্যার বিচার কার্যক্রম : ইতিহাসের জঘন্যতম জেলহত্যা মামলার বিচারকাজ সর্বোচ্চ আদালতে ২০১৩ সালে নিষ্পত্তি হয়। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত আট পলাতককে গ্রেপ্তার করে সাজা কার্যকরের অপেক্ষা জাতির এখনো শেষ হয়নি। ঘটনার ২৩ বছর পর ১৯৯৮ সালে অভিযোগপত্র দাখিলের পর বিচারিক থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তিতে লাগে দেড় দশক। চূড়ান্ত রায়ে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ১২ আসামির যাবজ্জীবন বহাল থাকে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিসহ অন্য পলাতকদের সাজা দীর্ঘদিনেও কার্যকর করা যায়নি। ৪৬ বছর আগের নৃশংস এ ঘটনার জন্য অভিযুক্ত ও পলাতকরা কবে গ্রেপ্তার হয়ে সাজা ভোগ করবেন, তা নিয়ে আক্ষেপ রয়েই গেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন ও আবদুল মাজেদ ছিলেন জেলহত্যা মামলার আসামি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জেলহত্যা মামলায় বিচারের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

২০১২ সালের ১২ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান এ মামলার রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হোসেন মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

এ ছাড়া বিচারিক আদালত শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আবদুর রশিদ, এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, বজলুল হুদা, এ এম রাশেদ চৌধুরী, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, মো. কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসার এই ১২ জনকে যাবজ্জীবন দেয়। এদের মধ্যে শেষের তিনজন ছাড়া বাকি আসামিরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলেও বাকিরা এখনো পলাতক।

২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলেও মারফত আলী ও হাশেম মৃধার খালাসের রায় হয়। এ ছাড়া সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন এই চারজনকে খালাস দেয় হাইকোর্ট।

জেলহত্যা মামলায় আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের আগেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় এ চারজনের মৃত্যুদণ্ড ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে কার্যকর করা হয়।

এদিকে জেলহত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় রয়েছেন বলে দীর্ঘদিন থেকে বলা হলেও তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আর খন্দকার আবদুর রশিদ ও শরিফুল হক ডালিম কোন দেশে অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সরাসরি গুলি করে খুন করা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোসলেম উদ্দিন জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলাতেও মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন। নাম পাল্টে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর২৪ পরগনা জেলার একটি এলাকায় অবস্থান করছিলেন এবং সেখানে তিনি গ্রেপ্তার হন বলে খবর প্রকাশ হলেও পরে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি। দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে থেকে চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশে আসা বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি ও জেলহত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদকে গত বছরের ৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ওই বছরের ৫ মে তার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com